রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

কফি চাষ স্বপ্ন দেখাচ্ছে কৃষকদের

নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি

কফি চাষ স্বপ্ন দেখাচ্ছে কৃষকদের

নালিতাবাড়ীতে কফি চাষ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে কফি চাষে স্বপ্ন দেখাচ্ছে কৃষকদের। কৃষিতে এ ফসল যেন এক নতুন অতিথি। কাক্সিক্ষত ফলন ও বাণিজ্যিক পথ সুগম হলে সুসময়ের দুয়ার খুলে যাবে এ অঞ্চলের কৃষকদের। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা এসে চারা নিয়ে যাচ্ছেন বিনামূল্যে। কৃষকরা দারুণ খুশি। উপজেলা কৃষি অফিস, উদ্যোক্তা ও কৃষকরা জানান, পৃথিবীতে ৬০ প্রজাতির কফি রয়েছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে দুই রকমের কফির চাষ রয়েছে। এ এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য এরাবিকা ও রোবাস্টা জাতের কফি চাষ শুরু হয়েছে। রোবাস্টা জাতের কফি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বেশি উপযোগী। পাহাড়ি অঞ্চলের আবহাওয়ায় এর সম্প্রসারণ সম্ভব। সংশ্লিষ্টরা জানান, কফির চারার পাতা দেখতে কিছুটা দেবদারু চারার মতো। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি প্রতিটি পরিপক্ব গাছে ফুল ধরা শুরু হয়। মে থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল থেকে গুটি গুটি ফলে পরিণত হয়। আগস্টের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ফল পরিপক্বতা লাভ করে। পরে এগুলো রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। বাজারজাত ও কফি পান করার উপযোগী করতে মেশিনের মাধ্যমে কফিবীজ গুঁড়া করে নিতে হয়। কফির বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায়। ফলন ভালো হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গাছপ্রতি ৫-৭ কেজি কফি পাওয়া সম্ভব। প্রতি কেজি কফির দাম ৮০-১০০ টাকা এবং প্রতি একরে ২৫০-৩০০টি গাছ লাগানো যায়। সে হিসাবে বছরে ২০০ কফি গাছ থেকে ১ হাজার ৬০০ কেজি পর্যন্ত কফি ফলন পাওয়া যায়। যার ন্যূনতম বাজারমূল্য ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে বান্দরবানে প্রজেক্ট ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসেন তুলিপ। রুমা উপজেলার ডার্জিলিং পাড়ায় কফি চাষ প্রথমে নজরে আসে তার। সেখান থেকেই কফি চাষ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসেন তুলিপ। ২০২১ সালে লাল লিয়াং বং-এর বাগান থেকে ৫ কেজি কফি কিনে চারা উৎপাদন করেন। সেই চারা পরীক্ষামূলক হালুয়াঘাট, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় এবং বান্দরবানের কিছু চাষির মধ্যে বিতরণ করেন। এরপর ২০২২ সালে আরও কফি কিনে রোপণ করে সেই চারা বিতরণ করেন। সেই চারাগুলো পরিপূর্ণভাবে এখন ফল দেওয়া শুরু করেছে। ওইসব কফি সংগ্রহ করে অল্প কিছু নিজস্ব মেশিনে রোস্টিং করে বাজারজাত করা হচ্ছে। কফি চাষে বাড়তি কোনো জমি লাগে না। বাড়ির যে কোনো বাগানে সাথী ফসল হিসেবে ছায়াযুক্ত জায়গায় চাষ করে বাড়তি আয় করা সম্ভব। উৎপাদিত কফি বিক্রি করার জন্য কৃষকদের কোথাও যেতে হচ্ছে না।

 কারণ সাজ্জাদ হোসেন তুলিপ ন্যায্যমূল্যে তা কিনে নিচ্ছেন। এতে কৃষকরা বাজারজাতকরণ ও সঠিক দাম পেয়ে খুশি। তিনি আশা করছেন- দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। বিন্নিবাড়ী গ্রামের চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ১০০ চারা নিয়েছি। আমার একটি ফলের বাগান আছে, সেই বাগানে রোপণ করব। রামচন্দ্রকুড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন বলেন, দুই বছর আগে আমি ৫৪টি চারা লাগিয়ে ছিলাম। এ বছর ৫০টি গাছে ফল ধরেছে। আমি আরও চারা লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। হালুয়াঘাট কড়ইতলি গ্রামের কৃষক মনির হোসেন বলেন, অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা জাতের ৪০০ কফির চারা রোপণ করেছি। এ বছর প্রায় ২৫০টি গাছে কফি ফল এসেছে। আশা করছি, প্রতিটি গাছ থেকে ২ থেকে ৩ কেজি কফি বিক্রি করতে পারব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মওদুদ আহাম্মেদ বলেন, উপজেলার পাহাড়ি এলাকার মাটিতে অম্লত্ব ও উর্বরতা শক্তি কফি চাষের উপযোগী। বৃষ্টিপাত ও মাটির গঠন বিন্যাস মিলে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্যোক্তাদের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ আছে। আমরা এ ব্যাপারে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর