সোমবার, ২২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

বাণিজ্যিক মাছি চাষ ভোলায়

জুন্নু রায়হান, ভোলা

বাণিজ্যিক মাছি চাষ ভোলায়

ভোলায় বাণিজ্যিকভাবে মাছি চাষের এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্ল্যাক সোলজার নামে এক প্রকার বন্ধু মাছি চাষ করে প্রতি মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করছেন মিজানুর রহমান নামের এক উদ্যোক্তা। তিনি জানান, ২০২৩ সালের পুরোটা সময় মাছি চাষ নিয়ে গবেষণা করেন। ভালো ফল পেয়ে বাণিজ্যিকভাবে চলতি বছর মাছি চাষ শুরু করেছেন। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর ফ্যাশনে তিনি ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই মাছির খামার গড়ে তুলেছেন। এখান থেকে মাছির লার্ভা মাছের উৎকৃষ্ট খাবার হিসেবে বিক্রি করেন।

মিজানুর রহমান জানান, প্রথমে মাছ চাষ করার স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামের তিনি। মাছের খাবারের দাম বেশি হওয়ায় ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের মিল পাচ্ছিলেন না। তাই মাছের বিকল্প খাবারের চিন্তা আসে মাথায়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব দেখতে শুরু করেন। একপর্যায়ে দেখেন মাছের খাবারের বিকল্প হিসেবে অনেকেই ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই নামের এক প্রজাতির মাছির লার্ভা ব্যবহার করছেন। এই লার্ভা একদিকে দামে সস্তা অপর দিকে মাছির লার্ভা মাছের খাবার হিসেবে যেমন নিরাপদ তেমনি এ লার্ভা খেলে মাছের বৃদ্ধিও দ্রুত হয়। এটা জানার পর মিজানুর রহমান ২০২৩ সালের পুরোটা সময় মাছি চাষ নিয়ে গবেষণা করেন। পরীক্ষামূলকভাবে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই মাছির লার্ভা তেলাপিয়া, পাঙ্গাশসহ বিভিন্ন ধরনের মাছকে খাওয়ান। কিছুদিন পর মাছের বৃদ্ধি দেখে বুঝতে পারেন এ লার্ভার গুরুত্ব কতটা। এরপর তিনি ভাবলেন এ খাবার দিয়ে অধিক লাভ করা যায় এমন মাছের কথা। তখন তিনি শোল ও কোরাল মাছ চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। আর তার এ মাছের খাবার জোগানের লক্ষ্য নিয়েই ২০২৪ সালে এই ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই মাছির খামার গড়ে তোলা। মিজানুর রহমান জানান শুরুতে নরসিংদী থেকে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই মাছির লার্ভা সংগ্রহ করেন তিনি। তারপর পচনশীল খাবার খাইয়ে লার্ভাগুলোকে বড় করে তোলেন। লার্ভাগুলো যখন কালো বর্ণ ধারণ করে তখন সেটি কয়েকদিনের মধ্যে মাছিতে পরিণত হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই মাছিগুলোকে রাখার জন্য মশারি দিয়ে ঘিরে একটি ঘর তৈরি করা হয়েছে। সেই লার্ভা কেজে পুরুষ এবং স্ত্রী মাছিগুলোকে বড় করা হয়। কিছু দিনের মধ্যে স্ত্রী মাছিগুলো ডিম দেয়।  ডিম দেওয়ার স্থান বড়ই অদ্ভুত। একটা বালতি তার ওপর দুই পাশে থাকে থাকে সাজানো কাঠের টুকরো। ওই কাঠের টুকরোর ফাঁকে ফাঁকে গিয়ে মাছি ডিম পেড়ে জমিয়ে রাখে। সেখান থেকে খামারের লোকজন ধারালো ছুরি দিয়ে ডিম সংরক্ষণ করে হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করেন। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সেই ডিম থেকে ছোট লার্ভা বের হয়। প্রথমে খালি চোখে দেখা যায় না বললেই চলে। ধীরে ধীরে লার্ভাগুলো বড় হতে থাকে। চার থেকে পাঁচ দিন পর লার্ভাগুলো কিছুটা বড় হলে অন্য একটি ঘরে নিয়ে রাখা হয়। ওই ঘরটা মূলত লার্ভাগুলোর খাবারের ঘর হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। সেই ঘরে ইট সিমেন্ট দিয়ে তৈরি সারি সারি চতুর্ভুজ আকৃতির পাত্র রয়েছে। ওই পাত্রগুলোতে বাজার থেকে সংগ্রহ করা পচনশীল খবার যেমন, সব ধরনের শাক সবজি, মাছ, ফল ইত্যাদি এ ধরনের খাবার দেওয়া থাকে। আর ছোট লার্ভাগুলো মূলত সেই পচনশীল খাবার খেয়ে বড় হতে থাকে। ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে লার্ভাগুলো বড় হয়ে মাছের খাবার উপযোগী হয়। তখন কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। তবে কিছু লার্ভা পুনরায় লার্ভা কেজে নিয়ে রাখা হয়। কয়েকদিন পর সেটি পরিপূর্ণ একটি মাছিতে রূপান্তরিত হয়। মিজানুর রহমান জানান, এ মাছিটিকে বন্ধু মাছিও বলা হয়। পরিবেশের বর্জ্যগুলো খেয়ে প্রোটিনে কনভার্ট করা এ মাছির কাজ। এতে পরিবেশ ভালো রাখা সম্ভব। মিজানুর রহমান জানান, প্রতিদিন এ খামারে এখন ১০০-১৫০ কেজি লার্ভা উৎপাদন হচ্ছে। তবে এ খামারে প্রতিদিন  ১ টন পর্যন্ত মাছির লার্ভা উৎপাদন সম্ভব। বাণিজ্যিকভাবে মাছের খাবার হিসেবে লার্ভা বিক্রি করা হচ্ছে এ খামার থেকে। এ খামার দেশের কৃষি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার জানান, মাছির লার্ভা মাছের খাবার হিসেবে খুবই উত্তম। এটিতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ রয়েছে যা মাছের বৃদ্ধিতে ভালো ভূমিকা পালন করে। এটিকে খুবই ভালো উদ্যোগ বলে মনে করছেন এই জেলা মৎস্য কর্মকর্তা। যেখানে মানুষ মাছি তাড়ায় রোগ জীবাণু ছড়ায় এটা ভেবে। আর সেখানে মাছি পালন করা হচ্ছে পরম যত্নে। অন্যদিকে আমিষের যোগান দিয়ে যাচ্ছে এ মাছি। এমন অভাবনীয় উদ্যোগ এবং উদ্যোক্তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার এমনটাই বলছেন এলাকাবাসী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর