চারদিকে হাঁকডাক। দরদামে ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতা। সমঝোতা হলে টাকা আদান প্রদান। বিক্রেতা আরও ৫০০ টাকা বেশি দাবি করেন। কিন্তু ক্রেতা হাসি দিয়ে ছাড় চান। একপর্যায়ে শ্রমিকরা নৌকা মাথায় তুলে পিকআপ ভ্যানে তুলে দেন। কেউ তুলে নেন রিকশা ভ্যানে। এ যেন নৌকার সড়ক বিলাস! এ দৃশ্য কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজারের নৌকার হাটের। এখানে শত বছরের বেশি সময় ধরে নৌকার হাট বসে।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মীরপুর গ্রামের জহিরুল ইসলাম ১১ হাজার টাকা দিয়ে একটি নৌকা কিনেছেন। বুড়িচংয়ের দক্ষিণগ্রামের পদ্মবিলের দর্শনার্থীদের জন্য এই নৌকা কিনেছেন। আসা-যাওয়া, শ্রমিক ও ইজারা মিলে তার ১৫ হাজার টাকা খরচ পড়বে। মুরাদনগরের কালারাইয়া গ্রামের সামছু মিয়া গরুর ঘাস কাটার জন্য নৌকা কিনেছেন। স্থানীয় জুনাব আলীও নৌকা কিনেছেন গরুর ঘাস কাটতে। তিনি বলেন, আগে নদী-খাল সচল ছিল। বাজার করার জন্য কিংবা স্বজনের বাড়িতে যেতে নৌকা ব্যবহার হতো। তবে এখন মাছের খামারে নৌকা বেশি ব্যবহার হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, রোদে যেন নৌকা শুকিয়ে না যায়, সেজন্য বিক্রেতারা পানি ছিটিয়ে দিচ্ছেন। ক্রেতারা হাত দিয়ে আঘাত করে পরীক্ষা করে দেখছেন নৌকার কাঠ কেমন? এ বাজারে পাশের খৈজুরি গ্রামের বিক্রেতাদের নৌকাই বেশি। পাশের হোমনা উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের বিক্রেতারাও আসছেন। বাজারে কোষা, পাতাইল্লা কোষা দুই ধরনের নৌকা বিক্রি হয়। উড়িকাঠ কাঠের নৌকা ১০-১২ হাজার এবং কড়িকাঠের নৌকা ৭-৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। খৈজুরি গ্রামের বিক্রেতা রিপন চন্দ্র সরকার ও স্বপন চন্দ্র সরকার বলেন, আমাদের গ্রামের অনেক পরিবার নৌকা তৈরি করেন। ডুমুরিয়া গ্রামের গোপাল চন্দ্র জানান, আমরা দাউদকান্দির গৌরিপুর, তিতাস ও মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর বাজারে নৌকা নিয়ে আসি। আমাদের গ্রামের ১৬০ পরিবার নৌকা তৈরি করেন। এ বাজারে নৌকার ভালো চাহিদা রয়েছে। বাজারের ইজরাদার বিমল চন্দ্র সরকার বলেন, রামচন্দ্রপুর প্রাচীন বাজার। প্রতি মঙ্গলবার ভোর থেকে বাজার বসে। স্থানীয় রামচন্দ্রপুর অধ্যাপক আবদুল মজিদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, রামচন্দ্রপুর বাজার ব্রিটিশ আমল থেকে প্রসিদ্ধ। নৌকার হাটের বয়স শত বছরের বেশি। পাশের হোমনা, বাঞ্ছারামপুর, নবীনগরসহ বিভিন্ন উপজেলার মানুষ এখানে নৌকা কিনতে আসেন।রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন বলেন, খৈজুরি সড়কের বেহাল অবস্থা নিয়ে অবগত রয়েছি। এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত সংস্কার করা যাবে।