রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

আকর্ষণ ২৪০ বছরের মসজিদ

আবদুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও

আকর্ষণ ২৪০ বছরের মসজিদ

ঠাকুরগাঁওয়ে ২৪০ বছরের পুরনো কারুকার্যময় এ মসজিদটি আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের এই ঐতিহাসিক জমিদারবাড়ির মসজিদ। ঠাকুরগাঁও শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই চোখে পড়বে অপূর্ব সৌন্দর্য আর দৃষ্টিনন্দন প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ। ১৭৮০ শতাব্দীতে মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন জমিদার আবদুল হালিম চৌধুরী। জামালপুর চৌধুরী পরিবার সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম বাংলার তৎকালীন উত্তর দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট মহকুমার রায়গঞ্জ থানার বারোর পরগনা তাজপুর গ্রামে পীর বংশে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল হালিম। ১৭৬৫ শতাব্দীর দিকে আবদুল হালিম কাপড়ের ব্যবসার উদ্দেশ্যে তাজপুর থেকে বসন্তনগরে আসেন। যার বর্তমান নামকরণ করা হয়েছে জামালপুর এবং সেখানে তিনি বসতি স্থাপন করেন। আবদুল হালিম চৌধুরী ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে তার রাজপ্রাসাদ নির্মাণে কাজ শুরু করেন। রাজপ্রাসাদের দ্বিতীয় তলার নির্মাণকাজ চলাকালীন ১৭৮০ দশকে ভারতের উত্তর প্রদেশের এলাহবাদ থেকে মিস্ত্রি এনে এই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। আবদুল হালিম চৌধুরীর মৃত্যু হলে জমিদারি পান তার ছেলে রওশন আলী চৌধুরী। পরে রওশন আলীর মৃত্যু হলে তার ছেলে জামাল উদ্দীন চৌধুরী জমিদারির দায়িত্বভার বহন করেন এবং মসজিদ নির্মাণকাজ চলমান রাখেন। জামাল উদ্দীন চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার ছেলে নুনু মোহাম্মদ চৌধুরী ১৮০১ দশকে মসজিদটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত করেন। মসজিদটি নির্মাণ করতে চার পুরুষের প্রায় ২১ বছর সময় লাগে। জামালপুর জমিদারবাড়ির সদস্য জুলফিকার আলী চৌধুরী বলেন, ১০ থেকে ১৫ বছর আগে মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নিলেও এখন পর্যন্ত মসজিদটি সংরক্ষণে তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

স্থানীয় প্রশাসন ও সরকার যদি মসজিদটি সংরক্ষণের জন্য সুদৃষ্টি দিত তাহলে এটি আরও দৃষ্টিনন্দন হয়ে থাকবে বলেও মনে করেন তিনি।

মসজিদটির শিল্পকলা দৃষ্টিনন্দিত, মনোমুগ্ধকর ও প্রশংসাযোগ্য। মসজিদে বড় আকৃতির তিনটি গম্বুজ আছে। গম্বুজের শীর্ষদেশ পাথরের কাজ করা। এই মসজিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো মিনারগুলো। মসজিদের ছাদে ২৪টি মিনার আছে। একেকটি মিনার ৩৫ ফুট উঁচু এবং প্রতিটিতে নকশা করা রয়েছে। গম্বুজ ও মিনারের মিলনে সৃষ্টি হয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্য।

মসজিদটির চারটি অংশ হলো- মূল কক্ষ, মূল কক্ষের সঙ্গে ছাদসহ বারান্দা, ছাদবিহীন বারান্দা এবং ছাদবিহীন বারান্দাটি অর্ধ প্রাচীরে বেষ্টিত হয়ে পূর্বাংশে মাঝখানে চার থামের ওপর ছাদবিশিষ্ট মূল দরজা। খোলা বারান্দার প্রাচীরে ও মূল দরজার ছাদে ছোট ছোট মিনারের অলংকার রয়েছে। মসজিদটির মূল দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ৬ ইঞ্চি। প্রস্থ ১১ ফুট ৯ ইঞ্চি। মূল কক্ষের কোণগুলো তিন থামবিশিষ্ট। এর জানালা দুটি, দরজা তিনটি, কুলুঙ্গি দুটি। মসজিদটির ভিতরে দরজায়, বারান্দায় এবং বাইরের দেয়ালগুলোতে প্রচুর লতাপাতা ও ফুলের সুদৃশ্য নকশা রয়েছে। একসঙ্গে এ মসজিদে প্রায় ৩০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন।

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান জানান, এই জামালপুর মসজিদটি দীর্ঘদিন আগের। শুনেছি মসজিদের কিছু মিনার ভেঙে পড়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি ওই ইউনিয়নের একটি আকর্ষণ। যেটি দেখতে অনেকেই আসেন। আমরা মসজিদ কমিটির সবার সঙ্গে কথা বলে এটা সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর