মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

খানাখন্দে ভরা সড়ক

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

সড়কের পিচ ও পাথর উঠে গেছে। তৈরি হয়েছে খানাখন্দের। কোথাও কোথাও কাদা জমে আছে। দেখলে মনেই হয় না এটি সড়ক। এসব স্থানে ভারী যানবাহন চলতে গিয়ে বিকল হচ্ছে। হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। সড়কটি বেহাল হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চার ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। এ অবস্থা লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা সদর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর আঞ্চলিক সড়কের। পাটগ্রাম পৌরসভার শেষ সীমানা থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর বাজার (বাঁশকল) পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কটির দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে তিন কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং উঠে বড় বড় গর্তে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। আবার কোথাও ঢিবির মতো উঁচু-নিচু। সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা বুড়িমারী ইউনিয়নের মেডিকেল মোড় থেকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়কের সংযোগস্থল বাঁশকল এলাকা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার অংশে।স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সড়কের এই অংশে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় পাথরবোঝাই ট্রাক চলাচল করে। বিভিন্ন এলাকায় পাথর খালাস করে আবার চলে যায়। এতে সড়কটি আরও বেহাল হয়েছে। বর্ষাকালে খানাখন্দ ও কাদায় প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ট্রাক বিকল হয়ে পড়ে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিডি) পাটগ্রাম উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাটগ্রাম সদর-বুড়িমারী স্থলবন্দর আঞ্চলিক সড়কটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাটগ্রাম সদর থেকে পৌরসভার শেষ সীমানা ধবলসূতী গ্রাম পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতায়। বাকি ১০ কিলোমিটার সড়ক স্থানীয় উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের আওতায় পড়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরের দিকে এলজিইডি ওই সড়কের বুড়িমারী ইউনিয়নের মেডিকেল মোড় থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর বাজার (বাঁশকল) পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করে। এর পর আর সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাটগ্রাম এলজিইডি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, উপজেলা সড়কের নকশায় সড়কটি প্রস্থে প্রথমে ১২ ফুট ও পরে ১৮ ফুটে উন্নীত করা হয়। বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যবাহী ভারতীয় ১০ চাকার ট্রাকে ৪০ থেকে ৫০ টন পাথর খালাসের জন্য এই সড়কে আনা হয়। ভারী গাড়ি চলায় খানাখন্দসহ বড় বড় গর্ত হয়ে গেছে। অতিরিক্ত ওজনের এসব ট্রাক আঞ্চলিক সড়কে চলাচল বন্ধ করার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বৈঠকে একাধিকবার আলোচনা হলেও সুফল মেলেনি। বুড়িমারী মেডিকেল মোড় এলাকা থেকে বাঁশকল পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার ঘুরে দেখা যায়, সড়কের কার্পেটিং উঠে ইটের খোয়া বের হয়ে কাঁচা মাটির সড়কে পরিণত হয়েছে। সড়কটির দুই পাশে ঢালের মাঝ বরাবর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে একটি গাড়ি আরেকটিকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারছে না। বিভিন্ন ভারী যানবাহন, অটোরিকশা, ভ্যান, রিকশা চলছে সড়কে। তবে গর্তের কারণে ধীরগতিতে চলাচল করতে হচ্ছে। দুর্ঘটনাও ঘটছে। পাটগ্রাম ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বলেন, এই সড়ক বেহাল অনেক দিন ধরেই। সড়কের কোথাও খানাখন্দ আবার কোথাও ঢিবির মতো উঁচু-নিচু। সড়কটি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। উফারমারা গ্রামের তফিয়ার রহমান, ফরিদুল ইসলামসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, তাদের উৎপাদন করা বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য বুড়িমারী স্থলবন্দর বাজারে ও উপজেলা সদরের হাটবাজারের নিতে হয়। ভাঙাচোরা রাস্তার জন্য এই দুই হাটে সময়মতো পণ্য নেওয়া যায় না। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে ভ্যানচালকরা মালামাল নিয়ে যেতে চান না। গেলেও বেশি ভাড়া দিতে হয়। এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা মানুষ প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্থানীয় এলজিইডি প্রকৌশলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। এলজিইডির পাটগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী মো. শফিউল ইসলাম বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই সড়কটি মেরামতের কাজ শুরু করা হবে। ভারী যানবাহনের জন্য নতুন নকশায় সড়কটির ওই তিন কিলোমিটারের জন্য আরসিসি ঢালাই করার কথা বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর