শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

দর ভালো, পাট চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি কৃষকের

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ার বাজারে পাটের দাম বেড়েছে, তাই চাষিরা উৎসাহের সঙ্গে পাট জাগ দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পাট হাটে তুলে বিক্রিও করছেন। তবে অতিবৃষ্টি ও খরায় এবার পাটের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় চাষিরা। ফলন কম হতে পারে আশঙ্কায় হাটে হাটে দামও বেড়েছে। এতে খুশি পাট চাষিরা। সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাবতলী উপজেলার গ্রামীণ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ডোবার জলে, নদীর অল্প পানিতে, পুুকুরের পানিতে কিংবা বৃষ্টির পর নিচু জমিতে জমে যাওয়া পানিতেও পাট ভেজানোর পর আঁশ ছাড়ানোর কাজ চলছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদী ঘেরা পারতিত পরলের গ্রামের পাট চাষিদের আঁশ ছড়ানোর কাজ শেষ। পথে পথে পাট চাষিরা পাটের আঁশ ছাড়িয়ে রোদে শুকিয়ে নিচ্ছেন। গৃহবধূরা ছাড়ানো পাটের আঁশ নিয়ে সড়কের পাশে বাঁশ টানিয়ে তার ওপর শুকিয়ে নিচ্ছেন। পাটের আঁশ ছাড়ানোর পর পাটকাঠিও শুকিয়ে বাজারে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাষিরা। কোথাও কোথাও আবার নতুন পাট বাজারে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। পাট শুকানোর গন্ধ নাকে এসে পড়ছে। এসবই কেবল এখন গ্রামীণ পথের দৃশ্য চোখে ভেসে বেড়ায়। কোনো কোনো উপজেলার চাষিরা রোদে শুকিয়ে নিয়ে হাটবাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। জানা যায়, কম খরচে লাভবান হওয়ায় প্রতিবছরই জেলায় পাট চাষ হয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। জুন ও জুলাই মাসে বগুড়া জেলায় পাট চাষ হয়ে থাকে। ঠিক এ সময়ই সারিয়াকান্দিতে বন্যায় বেশির ভাগ পাট পানিতে তলিয়ে যায়। নিমজ্জিত থাকায় চরাঞ্চলের নিম্ন এলাকার পাট এ বছর নষ্ট হয়ে যায়। বন্যার পর পরই আবার খরা দেখা দেয়। পাট চাষিরা পড়েন বিপাকে। আশানুরূপ ফলন পাননি। পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাট চাষিরা পাট কেটে জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে রোদে শুকিয়ে নিচ্ছেন। এ বছর নতুন পাটের আমদানি কম দেখা যাচ্ছে। বিগত দিনে হাটে হাটে প্রচুর পাটের আমদানি হতো। এ বছর সে রকম পাট দেখা যায়নি। নতুন পাটের আমদানি ভালো না থাকায় পাট ব্যবসায়ীরা বেশি দামে কৃষকের কাছ থেকে পাট কিনে নিচ্ছেন। সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউপির কুড়িপাড়া চরের পাট চাষি আবদুল বাছেদ মিয়া জানান, তিনি এ বছর সাত বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। দুই বিঘা জমির পাট বন্যায় নষ্ট হয়েছে। আর পাঁচ বিঘা জমিতে পাটের খুবই ভালো ফলন হয়েছে। তিনি বিঘাপ্রতি গড়ে আট মণ পাট পেয়েছেন। পাট আঁশ ছাড়িয়ে শুকিয়ে এখন হাটে তোলার অপেক্ষায় আছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হাটে পাট তোলা যায়নি। সে সময় দাম খুবই কম ছিল। এখন আবার দাম বাড়তে শুরু করেছে। পাট এখন বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ৩৪০০ টাকা মণ। কর্ণিবাড়ী ইউপির ইন্দুরমারা চরের পাট চাষি শাজাহান আলী জানান, চলতি বছরের বন্যায় পাট খুব একটা নষ্ট হয়নি। এবারে বন্যা কিছুটা কম হয়েছে। পাটও নষ্ট কম হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার পৌর এলাকায় হাটের দিনে কৃষকরা খুবই ভোরে অটোভ্যান, ভটভটি প্রভৃতি দিয়ে পাট বিক্রয় করতে সারিয়াকান্দি হাটে আসেন। সকাল ৯টার মধ্যে পাটের বেচাকেনা শেষ হয়। সকাল ৯টায় হাটে প্রায় দেড় হাজার থেকে ২ হাজার মণ পাটের আমদানি হয়। পাট সর্বনিম্ন ২৮০০ থেকে ৩৩০০ টাকা মন বিক্রি হয়েছে। ভালোমানের শুকনা পাট বিক্রি হয়েছে ৩৪০০ টাকা মণ।

সর্বশেষ খবর