শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

৪০ বছর বন্ধ রাইস অ্যান্ড অয়েল মিল

এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি

৪০ বছর বন্ধ রাইস অ্যান্ড অয়েল মিল

ঝালকাঠির মোহাম্মদিয়া রাইস অ্যান্ড অয়েল মিলের যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে

১৯৫০ সালে প্রায় ২০০ মেশিন নিয়ে ১১ বিঘা জমির ওপর মোহাম্মদিয়া রাইস অ্যান্ড অয়েল মিলের যাত্রা শুরু হয়। গুজরাটের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জামাল ছিলেন এর স্বত্বাধিকারী। তৎকালীন ঝালকাঠি মহকুমার নলছিটি বন্দরের প্রাণকেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত হয় দক্ষিণাঞ্চলে চাল, ডাল, আটা ও ভোজ্য তেল সরবরাহে বিশেষ অবদান রাখা ডিজেল ও কয়লায় চালিত এ মিল। নানা জটিলতায় ১৯৮৪ সালে বন্ধ হয়ে যায় মিলটি। তবে কালের সাক্ষী হয়ে এখনো পড়ে আছে এর বিশাল আকৃতির ব্রয়লার ও যন্ত্রপাতি। বয়োজ্যেষ্ঠরা জানান, পাকিস্তানি শাসনামলে উপমহাদেশের ইতিহাসে যে কয়টি রাইস অ্যান্ড অয়েল মিলের নাম পাওয়া যায় মোহাম্মদিয়া রাইস অ্যান্ড অয়েল মিল তার অন্যতম। ওই সময় এ মিলে উৎপাদিত চাল, ডাল, আটা ও তেল দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হতো। মিলটি সুগন্ধা নদীর পাশ থেকে ৩ শত মিটার দূরে অবস্থিত। সড়ক যোগাযোগ অনুন্নত থাকায় নদী পথেই এ মিলের মালামাল পরিবহন করা হতো। মিল থেকে উৎপাদিত পণ্য জাহাজে সরবরাহের জন্য নদী পর্যন্ত তৈরি করা হয় রেললাইন। প্রতিষ্ঠার কিছুদিনের মধ্যেই মিলটি লাভজনক শিল্পে পরিণত হয়। ৬০ থেকে ৭০ দশকে মিলে ৫ শতাধিক শ্রমিক কাজ করত। মিলটি দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। মিলটি বন্ধ না হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি চাল, ডাল, আটা ও ভোজ্যতেলের স্থানীয় যে চাহিদা রয়েছে তার সিংহভাগ সেখান থেকেই মেটানো সম্ভব হতো বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। মিলের মালিক মোহম্মদ জামালের পুত্রবধূ ইসরাত আমীন জানান, ১৯৭৪ সালে শ্বশুরের মৃত্যুর পর তার স্বামী মোহাম্মদ আমিন আনোয়ার মিলটির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর থেকে আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে লোকসানের মুখে পড়ে এ মিল। এরপর খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলা মিলটি কর্তৃপক্ষ ১৯৮৪ সালে উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। মিলটির মালিক আমিন আনোয়ার করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালে মারা যান। এরপর থেকে ইসরাত আমীন স্বামীর সম্পতি দেখাশোনা করে আসছেন। তিনি এর স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে আছেন। সুযোগ পেলে স্থানীয়দের জন্য আবারও নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে আগ্রহী ইসরাত আমীন।দেশ স্বাধীনের আগে খাদ্য অধিদপ্তর মোহাম্মদিয়া রাইস অ্যান্ড অয়েল মিলের ৫-৬টি গুদাম ভাড়া নিয়ে খাদ্যপণ্য মজুত রাখে। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধ চলার সময় গুদাম থেতে ওই খাদ্যপণ্য লুটপাট করা হয়। পরবর্তীতে খাদ্য অধিদপ্তর মোহাম্মদিয়া রাইস অ্যান্ড অয়েল মিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলা করেন। অন্যদিকে মিল কর্তৃপক্ষ বকেয়া গুদাম ভাড়া দাবিতে আদালতে একটি মামলা করেন। মামলা দু’টি দীর্ঘ বছর চলার পর ২০২২ সালে ক্ষতিপূরণ বাবদ আদালত থেকে ধার্যকৃত অর্থ খাদ্য অধিদপ্তরকে পরিশোধ করে দেয় মিল কর্তৃপক্ষ।

তিনি আরও বলেন, মিলটিতে বড় ধাক্কা আসে মুক্তিযুদ্ধের পর। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ও অপ্রতুলতার কারণে ১৯৭৫ সালের পর থেকে মিলটির লোকসান শুরু হয়। স্থানীয় একটি মহল ও মিলের কয়েকজন কর্মচারী যোগসাজশ করে এর মূল্যবান সম্পদ ও কিছু পরিমাণ জমি দখল করে নেয়। সেই জমি এখনো তাদের দখলেই রয়েছে। চুরি হয় মিলের অনেক যন্ত্রাংশ। তৎকালীন কাজের অংশীদার শাহজাহান মিয়া মজনু মিলটির সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে এর কিছু অংশ ভোগদখল করা শুরু করেন। এ নিয়ে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মামলা জটিলতা শেষ হলে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন মিল গড়ার আশা প্রকাশ করেন ইসরাত আমীন।

সরেজমিন দেখা যায়, মিলের ১১ বিঘা সম্পত্তির মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ জমি ও স্থাপনা প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। কারখানার অনেক মূল্যবান যন্ত্রাংশ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে একটি মসজিদ, কবরস্থান ও বেশ কয়েকটি আবাসস্থল রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, মামলা জটিলতা শেষ হলে নতুন উদ্যমে মিলটি আবারও চালু করতে চাইলে প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর