শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা
বগুড়া সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিস

বছরে ৮ কোটি টাকা ঘুষবাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বছরে ৮ কোটি টাকা ঘুষবাণিজ্য

বগুড়া সাবরেজিস্টি অফিস। দেয়ালে লেখা দুর্নীতি ও ঘুষমুক্ত। কিন্তু থেমে নেই অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষবাণিজ্য। এখানে প্রতি বছর দলিল রেজিস্ট্রিতে প্রায় ৮ কোটি টাকা ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগ আছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তরে টেবিলে টাকা ফেললে যেভাবে চাইবেন সবকিছু হবে। নামজারি, খতিয়ান, ডিসিআর, খাজনার রশিদ কিংবা ভূমি অফিসের রেকর্ডপত্র সবকিছুই পাওয়া যায় টাকার বিনিময়ে। ওপর মহলের ছত্রছায়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে ঘুষ সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট সদস্যরা বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছে নানা অপকর্ম। সদরের সাবরেজিস্ট্রার অনিমেষ কুমার পাল বলেন, ‘তার অফিসে কোনো সিন্ডিকেট নেই। নির্ধারিত ফির বাইরে বাড়তি টাকা নেওয়া হয় না।’ জেলা রেজিস্টার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জানা যায়, প্রতি মাসে সদর রেজিস্ট্রি অফিসে ৯ রকমের ৬০-৭০টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়। সেই হিসেবে বছরে গড়ে ২২০ কার্যদিবস ধরা হলেও রেজিস্ট্রিকৃত দলিল সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ হাজারের বেশি। এখানে রেজিস্ট্রিপ্রতি ঘুষের রেট সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা।

একাধিক দলিল লেখক জানান, শুধু জমি রেজিস্ট্রি নয়, দানপত্র, বণ্টনপত্র, ঘোষণাপত্র, অংশনামা ও চুক্তিপত্রের মতো কাজেও সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে ৫০-৬০ গুণ বেশি টাকা দিতে হয় দাতা-গ্রহীতার। দলিলের নকল (অনুলিপি) সংগ্রহ করতেও নেওয়া হয় অতিরিক্ত ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা। এক কর্মচারী জানান, গত জুন মাসে এখানে ঘুষ আদায় হয়েছে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা। বছরে এই অঙ্ক দাঁড়ায় ৭-৮ কোটি। সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের পিওন থেকে শুরু করে প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এ টাকার ভাগাভাগির সঙ্গে জড়িত। প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে ঘুষের টাকার ভাগ সবাই পেয়ে যায়। অফিস সহকারী তানজিল আল সরকার বলেন, ‘আমরা জোর করে কিছু নিই না। অনেকে ঝামেলার কাজ নিয়ে এসে স্বেচ্ছায় বকশিশ দিয়ে যান। নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতে বাধ্য করি, এই অভিযোগ সঠিক নয়।’

একাধিক দলিল লেখক জানান, ১ লাখ টাকার জমি নিবন্ধন করতে সাফ-কবলার জন্য ৬ হাজার ৫০০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়। চালানের মাধ্যমে এই টাকা গ্রহণ করে ব্যাংক। এর সঙ্গে দলিল লেখকের সম্মানীসহ আর ১৫০০ টাকা হলেই চলে। সেখানে গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার।

বগুড়া দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জানান, গ্রাহকদের মতো আমরাও হয়রানির শিকার হই। মোটা অঙ্কের ঘুষ না দিলে দলিলের কাজ সম্পন্ন হয় না।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর