মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

তিস্তার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রাম

কাঁদছে মানুষ, থাকছে না মাথা গোঁজার ঠাঁই

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

তিস্তার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রাম

লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের হরিণচড়া গ্রাম। তিস্তার তীব্র ভাঙনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামটি। বসতভিটা হারিয়ে কাঁদছে ওই গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই কোথায় হবে তা তারা জানেন না। তিস্তায় পানি বাড়তে থাকায় দেখা দিয়েছে এ নদীভাঙন। গত সাত দিনে তিস্তা নদীর ডানতীরের এ গ্রামে নদীভাঙনে ৩০টি বসতভিটা বিলীন হয়েছে। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে আরও শতাধিক পরিবার। একই সময়ে নদীগর্ভে চলে গেছে ৩০০ বিঘা জমির ধান সবজিসহ ফসলের খেত। লোকজন ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেললেও তা কোনো কাজে আসছে না। হরিণচড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হাকিম, মাহবুব হোসেন, ফারুক মিয়া জানান, তিস্তার বাম তীরে নদীভাঙন রোধে সংরক্ষণ কাজ হলেও ডানতীরে কোনো সময় কাজ হতো না। তাছাড়া নদীও ছিল অনেক দূরে। কিন্তু বর্তমানে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ডানতীর দিয়ে শ্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ব্যাপক নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে কৃষি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হচ্ছে। ভাঙনহুমকিতে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, বাজার। গ্রামটিতে ১২ হাজার লোকের বসবাস। নদীভাঙনে একেকজন তিন থেকে পাঁচবার পর্যন্ত বসতভিটা সরিয়েছেন। সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব এসব মানুষ উঁচু সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন, যাদের এক সময় সহায়সম্বল ছিল। সামাজিক অবস্থান ভালো ছিল। অভাব-অনটন ছিল না। তিস্তার বন্যা আর নদীভাঙনে নিঃস্ব এখন এসব পরিবার। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই তাদের। ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসেছে নদীভাঙনের শিকার কয়েক হাজার মানুষ। স্থানীয়রা আরও জানান, ভাঙন প্রতিরোধে তারা নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ দিয়েছে। কিন্তু তিস্তার প্রবল পানির স্রোতে সে প্রতিরক্ষা বাঁধও ভেঙে গেছে। এখানে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে ভাঙনরোধের ব্যবস্থার দাবি জানান তারা। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার রায় নদী ভাঙনের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তিস্তা নদীর বাম তীরে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় এখন ডানতীরেও ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে সাময়িকভাবে জিও ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। স্থায়ীভাবে প্রতিরোধমূলক বাঁধ দেওয়ার জন্য আবেদন প্রেরণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর