অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধানের মোকামের সার্বিক পরিস্থিতি। তবে ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত টাকা তুলতে না পারায় ব্যবসায়ীরা মোকামের জন্য চাহিদামতো ধান কিনে আনতে পারছেন না। এ ছাড়া চালকল মালিকরাও পর্যাপ্ত ধান কিনতে পারছেন না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শত বছরের বেশি সময় ধরে আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর তীরে ধানের হাট বসে। কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে এ মোকামে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ অন্তত সাত জেলার ব্যবসায়ীরা। এখান থেকে ধান যায় প্রায় আড়াই শ চালকলে। মূলত এ মোকামে বিআর-২৮, বিআর-২৯ এবং মোটা জাতের ধান পাওয়া যায়। ধানের মৌসুমে প্রতিদিন ৭-৮ কোটি টাকার ধান বেচাকেনা হয় এখানে। বর্তমানে দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ হাজার মণ ধান আসছে। তবে চাহিদামতো জোগান নেই। বর্তমানে বিআর-২৮ জাতের ধান প্রতি মণ কেনাবেচা হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০, বিআর-২৯ ধান ১ হাজার ৩৪০ থেকে ১ হাজার ৩৬০ এবং মোটা ধান কেনাবেচা হচ্ছে ১ হাজার ১৩০ থেকে ১ হাজার ১৪০ টাকায়। আশুগঞ্জ মোকাম থেকে প্রতি বস্তা (৫০ কোজি) বিআর-২৮ চাল ২ হাজার ৮০০ এবং বিআর-২৯ জাতের চাল বেচাকেনা হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চালকলগুলো থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০ কোটি টাকার চাল বাজারজাত করা হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে।
আশুগঞ্জ মোকামের ব্যবসায়ী মোবারক মিয়া জানান, তিনি সাত-আট বছর ধরে হাওরাঞ্চলের কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে এনে আশুগঞ্জ মোকামে বিক্রি করেন। সম্প্রতি দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত টাকা তুলতে পারছেন না। টাকার অভাবে মোকামের জন্য চাহিদামতো ধানও কিনে আনতে পারছেন না। এতে সংকটের কারণে ধানের বাজারদর বাড়ছে। চাল ব্যবসায়ী জসিম মিয়া জানান, আশুগঞ্জের ব্যাংকগুলোয় লেনদেন এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ফলে ব্যাংকে গিয়ে ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো টাকা তুলতে পারছেন না। আশুগঞ্জের রজনীগন্ধা অ্যাগ্রো ফুডের স্বত্বাধিকারী মো. হাসান ইমরান বলেন, ‘আমরা চালকলগুলোর জন্য পর্যাপ্ত ধান পাচ্ছি না মোকামে। ধান ব্যবসায়ীরা টাকার জন্য ধান কিনে আনতে পারছেন না। আমরাও ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে না পারায় ধান কিনতে পারছি না।’ আশুগঞ্জ উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘ব্যাংকিং কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক না হলে ধানচালের বাজারও স্বাভাবিক হবে না।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যাংকার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল কাইয়ূম খাদেম বলেন, ‘দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোয় স্বাভাবিক লেনদেন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে আমরা কোনো গ্রাহককেই ফিরিয়ে দিচ্ছি না, সবাইকেই কমবেশি করে টাকা দিচ্ছি।’