বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

বন্যায় পথে বসেছেন আড়াই হাজারের বেশি পোলট্রি উদ্যোক্তা

ফেনী প্রতিনিধি

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন ফেনীর আড়াই হাজারের বেশি পোলট্রি ও ডেইরি শিল্পের উদ্যোক্তা। তরুণ উদ্যোক্তা মো. আবদুল জলিল মামুন জানান, উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের বাড়িতে তিনি পোলট্রি খামার ও মাছ চাষ করেছিলেন। পুঁজির জন্য খালাতো ভাই ফারুক বাবুকেও সঙ্গে নেন। বানের জল কেড়ে নিয়েছে তার স্বপ্ন। তাদের পোলট্রি খামারে থাকা ১০ হাজার সোনালি ও লেয়ার মুরগি ও ৮টি মাছের ঘেরে ১০-১২ লাখ টাকার মাছ ছিল। বণিকের হাটের জালাল মাস্টার বাড়ি সংলগ্ন আজমাঈন আদর্শ খামার এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, হাজার হাজার মরা মুরগি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। এসব মরা মুরগি থেকে ছড়িয়ে পড়ছে উৎকট গন্ধ। খামারের পরিচালক মো. আবদুল জলিল মামুন বলেন, আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমার খালাতো ভাই বাবু ও আমার জমানো সব টাকা ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করা ৫০ লাখ টাকা পোলট্রি খামার ও মাছ চাষে বিনিয়োগ করেছিলাম। ডিলারের কাছ থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকার মাছ-মুরগির খাবারও বাকিতে এনেছি। কীভাবে এই টাকা পরিশোধ করব বুঝতে পারছি না। সহায় সম্বল সব হারিয়ে আমরা দুই ভাই এখন নিঃস্ব।জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক জানান, বন্যায় ফেনীতে প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়েছে ৩৯৬ কোটি ৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। খামারিদের ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।

 সব ধরনের সরকারি সহায়তার পাশাপাশি তাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হবে।

 প্রদান ও পরামর্শ-প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

ফেনী জেলা পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক, পোলট্রি ব্যবসায়ী কামরুল আলম জানান, সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের পূর্ব সিলোনিয়া গ্রামে তার পোলট্রি ফার্ম রয়েছে। নিচের তলায় ৩ হাজার লেয়ার মুরগি, ৮ হাজার সোনালি ব্রিডার মুরগি, ৬ হাজার সোনালি মুরগি ছিল। হঠাৎ বন্যায় সব মুরগি পানিতে ডুবে মারা যায়। বন্যায় তার প্রায় ৫০ লাখ টাকার মুরগিই মারা যায়।

সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের বাঘাইয়া গ্রামের ফখরুল ইসলাম মাসুক জানান, বন্যায় কেড়ে নিয়েছে তাঁর আটটি মুরগির খামার ও মাছের প্রজেক্ট। পোলট্রি ব্যবসায়ী মিরাজুল ইসলাম বলেন, দুটি খামারে ৩০ হাজার লেয়ার মুরগির একটিও বাঁচাতে পারিনি। আমরা এখন দিশাহারা, হতাশায় চোখ-মুখে কিছু দেখছি না।

বন্যায় জেলার ছয়টি উপজেলার আনুমানিক ১০ লাখ মানুষ দুর্যোগের শিকার হয়েছেন। জেলার ছয় উপজেলায় বন্যায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯১৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে প্রাণিসম্পদ খাতে প্রায় ৩৯১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বানের পানিতে তলিয়ে ৬৪ হাজার ১৬১টি গবাদিপশু ও ২৩ লাখ ৪ হাজার ৪১০টি হাঁস-মুরগির মৃত্যু হয়েছে। যার ফলে আয় ও পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন আড়াই হাজারেরও বেশি খামারি।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জেলার ছয়টি উপজেলায় মৃত পশুপাখির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০২ কোটি ৬৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২৯ লাখ ১৩ হাজার ৩১৩টি গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও ১ হাজার ৯৯২টি গবাদিপশুর খামারের ১৩ কোটি ১৭ লাখ টাকার এবং ১ হাজার ৬২৩টি হাঁস-মুরগির খামারের ১০ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ১৮ হাজার পুকুর ও দিঘির মাছ। এতে ২৮ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ২০ হাজার মানুষ।

সর্বশেষ খবর