শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
পদ্মায় রাতে বালু লুট

বিলীনের পথে ডিক্রিরচর

প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় বেপরোয়া বালু খেকো চক্র

ফরিদপুর প্রতিনিধি

বিলীনের পথে ডিক্রিরচর

ড্রেজার মেশিন দিয়ে তোলা হচ্ছে বালু -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পদ্মা নদীর ভাঙনে ফরিদপুরে ডিক্রিরচর ও নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের বেশির ভাগ অংশ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। পদ্মানদী থেকে রাতের আঁধারে যথেচ্ছ বালু উত্তোলনের কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলছে স্থানীয়রা। তারা বলছেন, একই কারণে হুমকির মুখে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার ফসলি জমি, বসতবাড়ি, পাকা রাস্তা, ব্রিজ, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা। প্রশাসনের নজরদারি না থাকার সুযোগ নিয়ে বালু খেকো চক্রটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।  সরেজমিন ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুরের পদ্মা নদীতে কোনো বালু মহাল নেই। ফলে সেখান থেকে বালু উত্তোলনের বৈধতা নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কতিপয় নেতা দীর্ঘদিন ধরে ডিক্রিরচর ও নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের পদ্মানদীর সিএন্ডবি ঘাট, ধলার মোড়, কবিরপুরচর, তাইজুদ্দিন মুন্সীর ডাঙ্গীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করত। মাঝেমধ্যে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে বালুসহ ট্রাক আটক করলেও পরে রহস্যজনক কারণে সেসব ট্রাক ছেড়ে দেওয়া হতো। অভিযোগ ছিল, প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু তুলত চক্রটি। একযুগের বেশি সময় ধরে এ চক্রটি পদ্মানদী থেকে বালু তোলার কারণে ডিক্রিরচর, নর্থ চ্যানেল, আলিয়াবাদ এলাকায় কয়েক হাজার পরিবার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন। সম্প্রতি, বালু উত্তোলনকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরেজমিন ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের তাইজুদ্দিন মুন্সীর ডাঙ্গীর পদ্মানদীতে দেখা গেছে, নদীর পাড় থেকে কিছুটা দূরে বালু তোলার ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ট্রলারে বালু ভর্তি করা হচ্ছে। বালু তোলার বেশ কয়েকটি ড্রেজার মেশিন বসানো হয়েছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ড্রেজার মেশিনটি দ্রুত গোয়ালন্দ ঘাটের দিয়ে চলে যায়। বালু নেওয়ার সাথে জড়িত ট্রলার চালক আবুল হোসেন জানান, প্রতি রাতে কমপক্ষে শতাধিক ট্রলার বালু উত্তোলন করা হয়। এসব বালু নদীর পাড়ের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে রাখা হয়। পরে দিনের বেলা এসব বালু বিক্রি করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন। ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও চক্রটি থামেনি। প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় এবং বিএনপির কতিপয় ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে নদী থেকে বালু লুটের মহোৎসবে চলছে। নামপ্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, নদী থেকে বালু লুটের কারণে ডিক্রিরচর ও নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নটির বেশীর ভাগ অংশ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। তারা জানান, এ চক্রটি অবাধে বালু উত্তোলন করছে নদী থেকে। আর বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন শুরু হলে এ চক্রটিই পানি উন্নয়ন বোর্ডের যোগসাজসে ভাঙনরোধে বালুর বস্তা ও সিমেন্টের বোল্ডার ফেলার কাজ করে। স্থানীয়দের দাবী, যারা নদী ভাঙনের জন্য দায়ী, তারাই আবার নদী ভাঙনরোধে কাজ পায়। পদ্মা নদীকে ব্যবহার করে তারা দুহাতে টাকা কামায়। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না তাসনিম বলেন, বিষয়টি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসককে জানিয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। কাউকে নদী থেকে বালু লুট করতে দেওয়া হবে না, সে যতই প্রভাবশালী হোক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর