রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা
দিনাজপুরে মধ্যপাড়া পাথর খনি

বিক্রি কমায় মজুতের পাহাড়

মজুত বেড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন

দিনাজপুর প্রতিনিধি

বিক্রি কমায় মজুতের পাহাড়

দিনাজপুরের মধ্যপাড়া খনিতে পাথর উৎপাদন বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মানের এবং কম দাম সত্ত্বেও নানা কারণে বিক্রি কমায় পাথরের মজুত বেড়ে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টনে পৌঁছেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে পাথরের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২ কোটি ১৬ লাখ মেট্রিক টন। বেশির ভাগই আমদানি হয় বিভিন্ন দেশ থেকে। কিছু নিয়মনীতি মানা হলে দেশের একমাত্র পাথর খনি লাভজনক হতে পারে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে। দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকাজে মধ্যপাড়ার পাথরের ব্যবহার বাধ্যতামূলক, আমদানি পাথরের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি এবং মধ্যপাড়ার পাথরের ট্যারিফ ভ্যালু কমানো হলে এ খনি লাভজনক হবে-এমনটাই দাবি সংশ্লিষ্টদের। তবে আগের তুলনায় পাথর বিক্রি বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পাথর বিক্রি হয়েছে। এর পরিমাণ ১ লাখ ২৮ হাজার ৪০৭ মেট্রিক টন। যাতে আশার আলো দেখছেন তারা। জানা যায়, ১ অক্টোবর পর্যন্ত মধ্যপাড়া পাথর খনির নয়টি ইয়ার্ডে পাথর মজুত বেড়ে হয় প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে খনিতে পাঁচটি সাইজে পাথর উত্তোলন হচ্ছে- ৫-২০ (৩-৪) মিমি, ২০-৪০ মিমি, ৪০-৬০ মিমি (ব্লাস্ট), ৬০-৮০ মিমি ও বোল্ডার। রেলপথে ব্যবহার্য ৫ লাখ ৭০ হাজার টন ব্লাস্ট পাথর এবং নদীশাসনের কাজের জন্য ২ লাখ ৮০ হাজার টন বোল্ডার পাথর প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এদিকে বিক্রি কমে যাওয়ায় খনি কর্তৃপক্ষ অর্থ সংকটে পড়েছে। ধারদেনা করে খনির ঠিকাদারের বিল ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে ২৭ সেপ্টেম্বর খনির ওয়েলফেয়ার ভবন চত্বরে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন দাবি মেনে নিয়েছে খনির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও খনিশ্রমিক নেতাদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া হয়। মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানিকৃত পাথরের তুলনায় মধ্যপাড়া খনি থেকে উৎপাদিত পাথরের গুণগত মান অনেক উন্নত। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জিটিসির ব্যবস্থাপনায় পাথর উত্তোলন বাড়লেও বিক্রি কমেছে। কিন্তু আমি বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টায় নেমেছি। বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে। সেপ্টেম্বরে শুধু পাথর বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৪০৭ মেট্রিক টন; যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।’ উল্লেখ্য, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায় ২০০৭ সালের ২৫ মে। উৎপাদন শুরুর পর থেকে নানা প্রতিকূলতার কারণে পেট্রোবাংলা প্রতিদিন তিন শিফটে ৫ হাজার মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এক শিফটে ৭০০-৮০০ মেট্রিক টনের বেশি পাথর উত্তোলন করতে পারেনি। ফলে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ছয় বছরে খনিটি লোকসান দিয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা। ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ছয় বছরের জন্য খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামকে (জিটিসি)। ইউরোপিয়ান সুদক্ষ প্রকৌশলী দল ও দক্ষ খনিশ্রমিক দিয়ে পাথর উত্তোলন কাজ চালানো হচ্ছে। পূর্ণমাত্রায় পাথর উৎপাদন করায় ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে চারবার মুনাফা করে খনিটি। জিটিসির প্রথম দফা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় দফা চুক্তির আওতায় ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাথর উত্তোলন করছে তারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর