শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা
ফরিদপুর

মধুমতীর ভাঙনে গৃহহীন হাজার হাজার মানুষ

হারিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি কৃষিজমি স্থাপনা * অন্যের জায়গায়, নদীর পাড়ে এবং রাস্তার ধারে মানবেতর জীবন সব হারানো মানুষের * অনেকেই খোলা আকাশের নিচে

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

মধুমতীর ভাঙনে গৃহহীন হাজার হাজার মানুষ

ফরিদপুরে মধুমতী নদীর তীব্র ভাঙন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মধুমতী নদীর তীব্র ভাঙনে দিশাহারা ও বিপর্যস্ত ফরিদপুরের গোপালপুর, টগরবন্দ, পাচুড়িয়া ও বুড়াইচ ইউনিয়নের নদীপাড়ের হাজার হাজার মানুষ। সবকিছু হারিয়ে অনেকেই এখন মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। এক মাসেই বিলীন হয়েছে দেড় শতাধিক বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট এবং কয়েক শ একর ফসলি জমি। নদীর দুই পাড়ে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে মাদরাসা, স্কুল, এতিমখানা, মসজিদসহ বসতঘর ও ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে নদীর পশ্চিম-পূর্ব পাড়ের মানুষ। নদী ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙন রোধে কাজ শুরু করা হবে। স্থানীয়রা জানান, জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কাতলাসুর, দিকনগর, চরআজমপুর, পাচুড়িয়া ইউনিয়নের বাঁশতলা ও টগরবন্দ ইউনিয়নের চরডাঙ্গা এবং বুড়াইচ ইউনিয়নের চরখোলাবাড়িয়া গ্রামে মধুমতীর ভাঙন চলছে। এক মাস ধরে নদীর পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ে ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, রাস্তাঘাট ও একরের পর একর ফসলি জমি। ইতোমধ্যে ওই চার ইউনিয়নের দেড় শতাধিক বসতবাড়ি এবং কয়েক শ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভাঙনঝুঁকিতে বুড়াইচ ইউনিয়নের চরখোলাবাড়িয়া এনবিডিসি আল হেরা দাখিল মাদরাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এতিমখানা, মসজিদ, গোরস্থান ও গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কাতলাসুর ও চরকাতলাসুর গ্রামের ‘স্বপ্ননগর’ ভূমিহীনদের সাড়ে তিন শ ঘরসহ কয়েকটি গ্রামের ৬ শতাধিক বসতভিটা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

এদিকে ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যের জায়গায় কোনোরকমে বসবাস করছে সব হারানো মানুষ। আবার অনেকেই নদীপাড়ে এবং রাস্তার ধারে তাঁবু টানিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। যেসব বসতবাড়ি ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে, সেসব বাড়ির লোকজন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।

কাতলাসুর গ্রামের কৃষক মোশাররফ হোসেন বলেন, কয়েক দিনে এ গ্রামে ঘরবাড়িসহ প্রায় ২০ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চরখোলা গ্রামের মহিতন বেগম, রুমা বেগম বলেন, ‘আমাদের ঘরবাড়িসহ গাছপালা নদীতে চলে গেছে। বাড়িঘর নাই, রাস্তার পাশে পড়ে আছি।’ চরখোলাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মধুমতীর পশ্চিমপাড়ের মানুষ আমরা। এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভিটামাটিহারা লোকজন অনেকেই রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। দাখিল মাদরাসা, মসজিদ, প্রাইমারি স্কুল, এতিমখানাসহ অনেক বাড়িঘর হুমকির মুখে। যে কোনো সময় নদীর পানি টান দিলে এসব স্থাপনা ভেঙে যেতে পারে।’

টগরবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘এলাকায় তীব্র নদীভাঙন শুরু হয়েছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। ভাঙনকবলিত স্থানে অল্প কিছু বালুর বস্তা ফেলা হলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। দায়সারাভাবে ফেলা হচ্ছে বালুর বস্তা। এ নিয়ে ভাঙনকবলিতদের মধ্যে প্রচ  ক্ষোভ রয়েছে। এ ছাড়া ভাঙনকবলিত হয়ে যারা বসতবাড়ি হারিয়েছেন তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের জন্য সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।’

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, ‘মধুমতীর ভাঙনকবলিত কিছু এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া আলফাডাঙ্গা ও মধুখালীতে সাড়ে ৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নদীর অন্য প্রান্তে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে বিষয়টি জানতে পেরেছি। দ্রুত ওই এলাকাগুলোয় ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর