১৮ নভেম্বর, ২০২০ ০১:২৫

আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন।

সুনির্দিষ্ট নয়টি অভিযোগ সম্বলিত এই অনাস্থা প্রস্তাব মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের নিকট জমা দিয়েছেন তারা। সন্ধ্যায় অনাস্থা প্রস্তাবটি পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর।

অনাস্থা প্রস্তাবের লিখিত কপিটি থেকে জানা যায়, ফারুক ইমরুল কায়েস উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ও উপজেলার অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ আচরণ, অশ্রাব্য কথাবার্তা ও দুর্নীতি করে আসছেন।

অভিযোগে বলা হয়, এডিপি’র প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বরাদ্দ নিয়ে চেয়ারম্যান সিংহভাগ অংশের প্রকল্প নিজে করার দাবি করেন এবং নিজের খেয়াল খুশিমতো প্রকল্প দিয়ে ঠিকাদারের নিকট হতে প্রকল্প নিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করে আসছেন। এছাড়াও কাজ সমাপ্ত হওয়ার আগেই বিল দাবি করেন যা নীতিমালা বহির্ভূত। তিনি কমিটির সদস্যদের মতামতের কোনো তোয়াক্কা করেন না।

এখানে আরো বলা হয়েছে, আদিতমারী উপজেলার টেন্ডারের উন্নয়নমূলক কাজগুলো ঠিকাদারের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে গ্রহণ করে নিজেই করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও মাসিক সভা চলাকালীন তিনি উত্তেজিত হয়ে অশ্রাব্য ভাষায় উপজেলা পরিষদ সদস্যদের সাথে অশোভনীয় আচরণ করেন। এতে সভায় বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যবৃন্দ বিব্রতবোধ করে থাকেন। ভিজিডি বা মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রেও তিনি নীতিমালা অনুসরণ না করে সিংহভাগ অংশ দাবি করেন।

গত বছরে ৪০টি ভাতা বরাদ্দ ছিল, যা চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়িত হয়েছে, যা নীতিমালা বহির্ভূত। এক্ষেত্রে তিনি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে ফোনে হুমকিও দিয়েছেন। বয়স্ক, বিধিবাভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসহ অন্যান্য ভাতার ক্ষেত্রেও তিনি নীতিমালা অনুসরণ না করে প্রভাব খাটিয়ে সিংহভাগ দাবি করেন।

এ কারণে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে ত্রিমুখী মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয় এবং সরকারি কাজে বাধার সৃষ্টি হয়। টিআর/কাবিখা প্রকল্পের ক্ষেত্রেও তিনি খেয়াল খুশি মতো প্রকল্পের অংশ দাবি করে একক সিদ্ধান্তে শতকরা ২৫ ভাগ অংশগ্রহণ করেছেন। এ ক্ষেত্রেও নীতিমালা মানা হয়নি। এছাড়াও পরিষদের সভায় নিয়মিত অংশ না নেওয়া, বিকেল বেলা অফিসে আসা, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামে অংশ না নেওয়া, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মোবাইল ফোনে গালিগালাজসহ হুমকি দেওয়া অন্যতম।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন, বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ ও জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ এবং অনাস্থা প্রস্তাব আনয়ন করেন।

অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষরকারী চেয়ারম্যানরা হলেন-দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ছালেকুজ্জামান প্রামানিক, ভেলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের মোহাম্মদ আলী, কমলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের আলাউদ্দিন আলাল, সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের অনন্ত কুমার রায়, সারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের আজিজুল ইসলাম প্রধান, মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী, ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদের রোকুনুজ্জামান রোকন ও পলাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী চেয়ারম্যান।

এ ব্যাপারে আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না বলে জানান। তবে তিনি এসময় দাবি করে বলেন, এটি করলে তারাই সমস্যায় পড়বেন।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, তিনি অনাস্থা প্রস্তাবের অভিযোগটি পেয়েছেন। এর বাইরে আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর