২৭ মে, ২০২১ ২১:২৯

ফুলপুরে ভাষা সৈনিক শামসুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

ফুলপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

ফুলপুরে ভাষা সৈনিক শামসুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

ময়মনসিংহের ফুলপুরে মরণোত্তর একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক পাঁচবারের এমপি ভাষা সৈনিক এম শামসুল হকের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।

এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ফুলপুর কাজিয়াকান্দা কামিল মাদ্রাসা জামে মসজিদে কোরআন খতম, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে, তারাকান্দা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে শামসুল হকের কবর জিয়ারত করা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হাকিম সরকার, উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল করিম রাসেল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শীতেষ চন্দ্র সরকার, মেয়র শশধর সেন, ওসি ইমারত হোসেন গাজী, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান গ্রামাউসের নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুল খালেক।

আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার শিহাব উদ্দিন খান, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীর, আওয়ামী লীগ নেতা শাহ সুলতান চৌধুরী, রামভদ্রপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে মুনাজাত পরিচালনা করেন কাজিয়াকান্দা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা জয়নুল আবেদীন। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, উপজেলার ১০ ইউনিয়নেই আজ মরহুম এম শামসুল হকের রূহের মাগফিরাত উপলক্ষে দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালের ২৯ জানুয়ারি রাজনীতিবিদ এম শামসুল হকের জন্ম হয়। ৭৪ বছর বয়সে ২০০৪ সালের এই দিনে (২৭ মে) তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সহচর। ১৯৪৬ সালে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ শহরে মিছিল শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ওই মিছিলে শামসুল হকের পাশে থাকা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অমলেন্দু বাবু পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন।

পরবর্তী সময়ে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ শহরে বিশাল মিছিল নিয়ে বের হওয়ায় তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের হাতে গ্রেফতার হন ও কারাবরণ করেন শামসুল হক। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্কুল, কলেজে মিছিল মিটিং, পথসভা, পোস্টারিং ও লিফলেট বিতরণসহ নানামুখী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি।

কখনো পায়ে হেঁটে, কখনোবা রিকশায় চড়ে এসব আন্দোলনে যোগদান করেন শামসুল হক। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র ছিলেন তিনি। আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় ময়মনসিংহ স্টেশন রোড থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। পরে ৬ মাস কারাগারে থাকার পর তিনি মুক্তি লাভ করেন। ময়মনসিংহ শহরে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। শামসুল হক ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ময়মনসিংহ-১৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ময়মনসিংহ-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

এর আগে, ১৯৮৮ সালে তিনি ফুলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক। তার পঞ্চম সন্তান শরীফ আহমেদ ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসন থেকে দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় শরীফ আহমেদকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর