৭ জুন, ২০২১ ১২:১৬

ভালো নেই সুনামগঞ্জের পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা

সাইফুল ইসলাম বেগ, বিশ্বনাথ

ভালো নেই সুনামগঞ্জের পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা

মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র সামনে নিয়ে বসে আছেন এক মৃৎশিল্পী

যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় আধুনিক তৈজসপত্রের দাপটে ব্যবহার কমেছে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের। কদর নেই এখন, গ্রাম-বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য মৃৎশিল্পের। ভাটা পড়েছে কারিগরদের জীবন-জীবিকায়ও। দিনভর কঠোর পরিশ্রমে যা আয় হয়, তা দিয়ে পেট চালানোই দায় হয়ে পড়েছে মৃৎশিল্পীদের। 

বছরে দু’বার বাংলা নববর্ষ ও চৈত্র সংক্রান্তির মেলায় গৃহস্থালির পণ্য বিক্রি করে কোনমতে চলছিল জীবিকা। করোনায় মেলা বন্ধ থাকায়, বন্ধ তাদের আয়-রোজগারের পথও। তাছাড়া মেলামাইন, স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক শিল্পের ব্যাপক প্রসার ও চাহিদার স্বল্পতাসহ নানা কারণে এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।

সরেজমিন মৃৎশিল্পের জন্যে প্রসিদ্ধ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কুবাজপুর গ্রামের পালপাড়ায় যাওয়া হয়। ওই পাড়ায় ২০-২২টি পরিবারের বসবাস। এখনও তাদের প্রধান পেশা মৃৎশিল্প। ঐতিহ্যকে ধারণ করে অনেক কষ্টে পৈত্রিক পেশাকে টিকিয়ে রেখেছেন তারা। গিয়ে দেখা যায়, মাটির জিনিসপত্র তৈরিতে আগের ব্যস্ততা নেই পাড়ায়। গুটিয়ে রাখা হয়েছে জিনিসপত্র তৈরির বিভিন্ন উপকরণ। বন্ধ রয়েছে চুলো, স্তূপ আকারে পড়ে আছে মাটি। রঙ-তুলির আঁচড় পড়েনি তৈরি করা মাটির কলস, ফুলদানি, ব্যাংক, হাঁড়ি-পাতিল, টালি, ঘট, মুটকি, কড়াই, থালা-বাসন, সরা-সানকি, পুতুল, পশু-পাখি ও হরেক রকম খেলনায়। মেলা বন্ধ, বিক্রিও বন্ধ। এই আর্থিক ক্ষতি আদৌ কাটিয়ে উঠতে পারবে কিনা জানা নেই তাদের।

কথা হয় পঞ্চাশোর্ধ সন্তোষ পালের সাথে। তিনি জানান, এটি তার পিতৃ পেশা। ছোট বেলা থেকে তিনি এ পেশার সাথে জড়িত। আগের মতো মাটি সহজেই পাওয়া যায় না। চলে না জিনিসপত্রও। কোন মতে এ পেশাকে ধরে রেখেছেন তিনি। আগে কম দামে মাটি সংগ্রহ করা গেলেও এখন মাটি কিনতে হয় বেশি দামে।

এছাড়া মাটি ও জ্বালানির দাম বাড়ায়, বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। ফলে বাধ্য হয়েই তাদের সম্প্রদায়ের সদস্যরা অন্যান্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। নারী মৃৎশিল্পী চামেলি পাল (৪৫) বলেন, কঠোর পরিশ্রমে যা আয় হয়, তা দিয়ে এখন আর সংসার চলে না। কাঁচা মালের দাম বাড়তি হওয়ায় লাভ হয় না আশানুরূপ। মাসে ১০-১৫ হাজার টাকার মালামাল প্রস্তুত করা হলেও বিক্রি হয় না সব। আবার সঠিক দামও পাওয়া যায় না। তাই জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেকে পরিবর্তন করছে পূর্ব পুরুষের ‘কুমার পেশা’। এ শিল্পকে ঠিকিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তা জরুরী।

এ বিষয়ে কথা হলে জগন্নাথপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বিলাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যুগের চাহিদায় মৃৎশিল্পের দু:সময় চলছে এখন। অসহায় দিনযাপন করছেন শিল্পীরা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন-মান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইতিপূর্বে আমরা তাদের প্রশিক্ষণ ও ভাতা দিয়েছি। বরাদ্দ আসলে পর্যায়ক্রমে সবাইকে সহায়তা দেয়া হবে।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর