৮ জুন, ২০২১ ২২:১২

লালমাই পাহাড়ে চলছে কাঁঠাল বিক্রির উৎসব

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

লালমাই পাহাড়ে চলছে কাঁঠাল বিক্রির উৎসব

লালমাই পাহাড়ে চলছে কাঁঠাল বিক্রির উৎসব।

কুমিল্লার লালমাই পাহাড়। সেখানে এখন কাঁঠালের মৌ-মৌ ঘ্রাণ। পাহাড় এলাকায় প্রবেশ করলে নাকে এসে ধাক্কা দেবে কাঁঠালের মিষ্টি ঘ্রাণ। চোখে পড়বে কাঁঠালের উৎসব। গাছ থেকে কাঁঠাল কাটা হচ্ছে। তা এনে জড়ো করা হচ্ছে সড়কের পাশে। সেখান থেকে পিকআপ ভ্যান যোগে কাঁঠাল চলে যাচ্ছে বিভিন্ন বাজারে। এছাড়া পাহাড়ের পাশের বিভিন্ন বাজার গুলোতেও বসছে কাঁঠালের বাজার। চন্ডিমুড়া, রতনপুর, লালমাই ও বিজয়পুর বাজার কাঁঠালের ক্রেতা-বিক্রেতায় এখন সরগরম। 

সূত্র মতে, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, সদর, বরুড়া ও বুড়িচং উপজেলায় লালমাই পাহাড়ের অবস্থান। তবে বেশি অংশ সদর দক্ষিণে পড়েছে। পাহাড়ের সালমানপুর, জামমুড়া, হাতিগাড়া, বিজয়পুর, রতনপুর, রাজার খোলা ও চৌধুরী খোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশি কাঁঠাল উৎপন্ন হয়।

পাহাড়ে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে লালমাই পাহাড়ে একটি সড়ক প্রবেশ করছে। প্রথমে সালমানপুর। এখানে সড়কের মোড়ে বাগান ক্রয় করা পাইকার কাঁঠাল নিয়ে অপেক্ষা করছেন। পাইকার রমিজ উদ্দিন অপেক্ষায় আছেন কাঁঠালের পাইকারি ক্রেতার। পাহাড়ের গা বেয়ে একটু বামে গেলে জামমুড়া এলাকা। পাহাড়ের ঢালুতে এখানে কয়েক ভাগে কাঁঠালের উৎসব বসেছে। কেউ বাগান থেকে কাঁঠাল কাটছেন। কেউ পাইকারকারকে কাঁঠাল বুঝিয়ে দিচ্ছেন। পাইকার গাড়িতে কাঁঠাল তুলছেন। নগদ টাকায় কাঁঠাল বিক্রি করে খুশি বাগান মালিকরা। চলছে ক্রেতা বিক্রেতার হাঁকডাক। এমন হাঁকডাক শোনা যায় পুরো পাহাড়েই।

জামমুড়া এলাকার বাগান মালিক মোস্তফা আলী বলেন, এখানে কয়েক ধরনের ক্রেতা-বিক্রেতা আছেন। এখানে ব্যক্তি উদ্যোগে পাহাড়ে-ঢালুতে কাঁঠাল বাগান করা হয়। ফল আসার পর পাইকার কাঁঠাল বাগান ক্রয় করেন। তারা আবার ফল পাকার পর আরেক পাইকারের নিকট বিক্রি করেন। কয়েক হাত হয়ে কাঁঠাল বাজারে আসে। তার ২৫/৩০টি গাছ আছে। তিনি কাঁঠাল কেটে এনে পাইকারের নিকট সরাসরি বিক্রি করছেন। বড় জাতের কাঁঠাল প্রতিটি ১০০/১২০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।

ওই এলাকার বাগান ক্রয় করা পাইকার ছায়েদ আলী বলেন, তিনি ১০ বছর ধরে কাঁঠাল বাগান ক্রয় করেন। এবার ২৫০ গাছের বাগান ক্রয় করেছেন। এখানে ২৬০০ কাঁঠাল আছে। বৃষ্টি কম হওয়ায় কাঁঠালের সাইজ বাড়েনি। মাঝারি সাইজ ৬৫ টাকা এবং ছোট গুলো ২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তাই এবার লাভ কম হবে। ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে বাগান কিনেছেন। ইতিমধ্যে ৬০ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করেছেন। আশা করছেন মোট দেড় লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি করতে পারবেন।

কাঁঠালের খুচরা বিক্রেতা সাইফুল ইসলামের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে। তিনি থাকেন কুমিল্লা নগরীর ধর্মপুরে। তিনি জামমুড়া থেকে ১০০ কাঁঠাল ৯ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন। আশা করছেন, এই কাঁঠাল ফেরি করে বিক্রি শেষে খরচ বাদে তার দুই হাজার টাকা লাভ থাকবে।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, পাহাড়ের অধিকাংশ এলাকা সদর দক্ষিণে। এখানে স্থানীয় জাতের কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। এসময় পাহাড়ে কাঁঠাল বিক্রির ধুম পড়ে যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, জেলায় ৩৩৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হয়। তার মধ্যে লালমাই পাহাড় এলাকায় ১৩৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হয়। পাহাড়ে ২৮০০ মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। এই পাহাড়ের কাঁঠাল স্বাদে অনন্য। তাই এর চাহিদা বেশি। কাঁঠালের চাষ ও বিক্রির সাথে সাথে জড়িত হাজারো মানুষের এসময় বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর