২৭ জুন, ২০২১ ১৬:১৮

মহেশপুরে ‘ড্রাগন গ্রাম’ নামে পরিচিত গৌরিনাথপুর

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

মহেশপুরে ‘ড্রাগন গ্রাম’ নামে পরিচিত গৌরিনাথপুর

মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের গৌরিনাথপুর গ্রামের একটি ড্রাগন বাগান।

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার একটি গ্রামে ১০০টি ড্রাগন ফলের বাগান করে গ্রামটি এখন ড্রাগন গ্রাম নামে পরিচয় লাভ করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গ্রামের স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সাথে তারা নিজেরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, মহেশপুর উপজেলার সব থেকে অবহেলিত গ্রাম হিসেবে ছিল আজমপুর ইউনিয়নের গৌরিনাথপুর গ্রাম। এই গ্রামের মাটিতে শুধু বাদাম ও আমগাছ ছাড়া কিছুই হতো না। গ্রামের লোকজন বেশিরভাগ ছিল দিনমজুর। ঘরবাড়ি ছিল পাটখড়ির বেড়া ও উপরে টিন। এখন সেই গ্রামের প্রায় সবার দালান বাড়ি তৈরি হচ্ছে।

গৌরিনাথপুর গ্রামের এইচএসসি পাশ করা শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম প্রথম এই গ্রামে সীমিত পরিসরে পরীক্ষামূলক ড্রাগনের চাষ শুরু করে। সেই সময় এই ফল সম্পর্কে এত পরিচিত ছিল না।

নজরুল ইসলাম জানান, এক সময় ড্রাগন ফল বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ আছে যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী ফল। তাই আমি একটি আমবাগান কেটে সেখানে ড্রাগনের চাষ শুরু করি। সে সময় এক বিঘা জমি তৈরি করতে তার ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ হয়। এখন অনেক কম টাকায় বাগান তৈরি করা যাচ্ছে। বর্তমানে তার ১৫ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ রয়েছে।

গ্রামের নতুন একজন কৃষক সোহাগ সরকার জানান, আজমপুর ইউনিয়নের গৌরিনাথপুর গ্রামে ১০০ বিঘার মতো বাগান আছে। তিনি জানান, আমি প্রথম বছরেই ড্রাগন চাষ করে সফলতা লাভ করেছি। এখন এক বিঘা জমি তৈরি করতে দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনাই এখানে কম খরচে বাগান তৈরি করা সম্ভব। তার ৭ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ আছে। প্রথম দুই বিঘা ৫ কাঠা জমিতে ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এখন এক বিঘা জমি তৈরি করতে মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার খরচ হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, ২ বিঘা বাগান থেকে ইতিমধ্যে ৩ লাখ টাকার ফল বিক্রি করা হয়েছে। বর্তমান বাগানে এখন ৪ লাখ টাকার মতো ফল আছে। এভাবে এই বছরে বাগান থেকে তিন চার বার ফল বিক্রি করতে পারব। শুধু ড্রাগন ফল বেচেই এই গ্রামের চাষিরা ২ কোটি  টাকা আয় করবে বলে তিনি মনে করেন। তার মতে, বর্তমান বাজার ব্যবস্থার দিকে সরকার একটু নজর দিলে তারা আরো বেশি লাভবান হবেন এবং আরো বেশি বাগান তৈরি হবে বলে তার ধারণা।

এইচএসসি পড়ুয়া ইমরান হোসেন নামের এক ছাত্র জানান, করোনাকালীন স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় গ্রামের ছাত্ররা লেখাপড়ার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগনের চাষ শুরু করেছে। যারা বাগান করতে পারেনি তারা তাদেরই কৃষি উদ্যোক্তা বন্ধুর জমিতে কাজ করছে। এখন আর এই গ্রামের কোনো ছাত্র বসে নেই।

আজমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার খান জানান, আমার ইউনিয়নের গৌরিনাথপুর গ্রামে এই ড্রাগন চাষ সবচেয়ে বেশি। এর আগে মাত্র দুই জন চাষি এই ফলের চাষ করতো এবং তারা সবচেয়ে বেশি লাভবান হতো। এখন গ্রামটি ড্রাগন গ্রাম নামেই পরিচয় লাভ করেছে। তার মতে, সরকার বাজার ব্যবস্থার উপর মনিটরিং করলে এলাকার কৃষকরা বেশি উপকৃত হবে এবং তারা আরো বেশি লাভবান হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাসান আলী জানান, এ উপজেলাতে ৫০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করা হয়েছে। কিন্তু একটি গ্রামেই সবচেয়ে বেশি এই ফলের চাষ। আমি প্রতিনিয়ত ওই গ্রামের কৃষকদের খোঁজখবর নেই এবং তাদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি। ড্রাগন ফলে জিংক ও মিনারেলসহ পুষ্টিগুণ বেশি। এই ফলটি করোনা রোগীদের জন্য একটি মহা ওষুধ। গত বছরের চেয়ে এ বছর দাম একটু কম, তারপরও কৃষকরা লাভবান হবে বলে তিনি মনে করেন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর