১৬ জুলাই, ২০২১ ১৯:৪৬

সাতক্ষীরার পশুরহাটে নেই স্বাস্থ্যবিধি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরার পশুরহাটে নেই স্বাস্থ্যবিধি

সাতক্ষীরার পশুরহাটে নেই স্বাস্থ্যবিধি

সরকার ঘোষিত ১৫ জুলাই থেকে লকডাউন শিথিল হলেও তার একদিন আগে থেকেই স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা সাপেক্ষ্যে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শুরু হয়েছে কোরবানির পশুর হাট। ইতিমধ্যে পশু বেচা-বিক্রিতে জমে উঠতে শুরু করেছে। তবে কোনভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট পরিচালিত হচ্ছে না। 

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সাতক্ষীরায় ৫৬ হাজার ৪০১টি পশু ইষ্ট-পুষ্ট করেছে খামারিরা। এর মধ্যে ৩০ হাজার ৪৮৬টি গরু ও ২৫ হাজার ৯১৫টি ভেড়া ও ছাগল প্রাকৃতিক উপায়ে মোটা তাজা করেছে খামারিরা। জেলা প্রাণি সম্পাদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে যার আনুমানিক দাম ধরা হয়েছে ২৩২ কোটি টাকা। উৎপাদিত এসব গবাদি পশুর মধ্যে জনসংখ্যা অনুযায়ী চাহিদা রয়েছে ৪৮ হাজার ৯৫১টি পশু। জেলার চাহিদা অনুযায়ী উৎবৃত্ত বাকি ৭ হাজার ৪ শত ৫০টি গরু, ছাগল ও ভেড়া মহিষ বাইরের জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব। 

শক্রবার সরেজমিনে সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে প্রচুর গরু ও ছাগল বেচা-কেনা চলছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়।  তবে অধিকাংশদের মুখে মাস্ক পরা, দূরুত্ব বজায় রাখার কোন বালাই নেই সেখানে। সরকারের বিধি-নিষেধের আওতায় ক্রেতা-বিক্রেতার একমুখি চলাচল, তাপ মাপা যন্ত্র এবং হাত ধোয়র জন্য পর্যাপ্ত বেসিন, সাবন রাখতে বলা হলেও কোন কিছু করা হয়টি। আশাশুনি উপজেলা প্রাণি সম্পাদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রাণি সম্পাদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি টিম বাজারে ভ্রাম্যমাণ টিম কাজ করছে। 

বাজারে গরু বিক্রি করতে আসা কুল্যা গ্রামের আব্দুল্লাহ জানান, তার ৭ মণ ওজনের গরুটির দাম হাকানো হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু সবোর্চ্চ দাম উঠেছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা । তার উপরে কেউ দাম বলছে না।

গোবরদাঁড়ি গ্রামের আব্দুল কাদের জানান, তার ১২০ কেজি ওজনের গরুটি বিক্রির জন্য বুধহাটা গরুর হাটে এনে ছিলেন। মূল্য ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু দাম উঠেছে মাত্র ৪৫ হাজার টাকা। তিনি জানার, গত বারের তুলনায় বাজার মূল্য অনেক কম। তিনি আরও জানান, লকডাউনের কারনে গোখাদ্যের দাম বৃদ্বি পাওয়ায় পশু পালন করতে তাই বাড়তি খরচও হয়েছে বেশি।

এদিকে বড় বড় গরু পালন করে আলোচনায় এসছে সাতক্ষীরার কয়েকটি খামারি, তার মধ্যে অন্যতম পাটকেলঘাটা থানার নগরঘাটা গ্রামের উত্তর পাড়ার আব্দুল মাজেদ বিশ্বাসের খামারের ২৫ মণ ওজনের শাহিওয়াল জাতের গরু “রাজা বাবু”র দাম হাকানো হয়েছে ৭ লাখ টাকা। বুধবার পাটকেলঘাটার পশু হাটে গরুটির দাম উঠেছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। তিনি জানান ঢাকা, রাজশাহী, চট্রগ্রাম থেকে ব্যাপারি সাতক্ষীরায় না আসায় এবার বাজার মূল্য অনেক কম। এজন্য তিনি শনিবার বিকেলে রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যবাহী গাবতলি পশুর হাটে গরুটি বিক্রির জন্য ট্রাকযোগে রওনা হবেন।
  
আব্দুল মাজেদ বিশ্বাস জানান, দুই যুগ ধরে গরু পালন করছেন তিনি। এবছর তার খামারে ১০টি গরু রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় গরু রাজা বাবু। তিন বছর যাবত লালন পালন করছেন। বিশাল অকৃতির রাজা বাবুর যত্নটাও একটি বেশি। ২৫ মণ ওজনের তার গোয়ালের রাজা বাবুকে দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। নামে যেমন রাজাবাবু স্বাস্থেও রাজার মতই। প্রতিদিন রাজাবাবুর খাদ্যের খরচ হয় তিন থেকে চারশত টাকা। করোনার প্রভাবে গরু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারের মালিক আব্দুল মাজেদ বিশ্বাস ও তার পরিবার। করোনার কারনে মানুষ বড় গরু ক্রয় করছে না বলে বিক্রি নিয়ে শঙ্কার কথা জানান আব্দুল মাজেদ।

সাতক্ষীরা জেলা প্রাণি সম্পাদক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জানান, মহামারি করোনার কারনে নায্যমূল্যে পশু বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছে খামারিরা। মাস জুড়ে লকডাউন থাকায় বাইরের জেলা থেকে গরুর ব্যাপারিরা সাতক্ষীরায় আসতে পারেনি। সে কারনে জেলায় যারা ১০ থেকে ২৫/৩০ মণ ওজনের বিভিন্ন জাতের গরু উৎপাদন করেছেন। সে সকল খামারি গরু বিক্রি নিয়ে বিপাকে আছেন। তিনি আরও জানান কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে জেলায় ৩০ হাজার ৪৮৬টি গরু ও ২৫ হাজার ৯১৫টি ভেড়া ও ছাগল প্রাকৃতিক উপায়ে ইষ্ট-পুষ্ট করেছেন খামারিরা। যার আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে ২৩২ কোটি টাকা। করোনার কারনে পশুর উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না খামারিরা।


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর