৩ আগস্ট, ২০২১ ০৯:৩৮

বদলে গেছে নীলফামারীর ছিটমহলবাসীর জীবনযাত্রা

আবদুল বারী, নীলফামারী

বদলে গেছে নীলফামারীর ছিটমহলবাসীর জীবনযাত্রা

বদলে গেছে নীলফামারীর ছিটমহলবাসীর জীবনযাত্রা

ছিটমহল বিনিময়ের সেই মুক্তিগাঁথার ৬ বছর অতিবাহিত হয়েছে। ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের চরম দুঃখ-কষ্ট, বন্দিদশা আর নেই। এই মানুষগুলো নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই রাত থেকে দীর্ঘজীবনের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকদের সাথে একীভুত হন ডিমলা উপজেলার চারটি ছিটমহলের ১ হাজার ১৮৩ জন বাসিন্দা, যার আয়তন ১৬৮ দশমিক ৪৮ একর।

আনন্দনগর, নতুন বাংলা, নগর জিগাবাড়ি ও নয়া বাংলা নীলফামারীর এই সাবেক চারটি ছিটমহল ঘুরলে চেনা যাবে না সেই বিলুপ্ত ছিটমহলের আগের চিত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। দেখতে দেখতে বদলে গেছে অবহেলিত সেই মানুষগুলোর জীবনযাত্রা। রাস্তা, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। স

রেজমিনে বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে এসব এলাকায়। বদলে গেছে জীবন যাত্রার মান। কাঁচা রাস্তা হয়েছে পাকা, আলো জ্বলছে ঘরে ঘরে, বিশুদ্ধ পানির জন্য বসেছে নলকূপ, হয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্র এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্পন্নের জন্য হয়েছে কমিউনিটি সেন্টার। ভিজিডি কার্ড, ভিজিএফ, সরকারি নানা প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা পাচ্ছে এই এলাকার মানুষেরা।

বিলুপ্ত ছিটমহল নগর জিগাবাড়ির বাসিন্দা শাহজাহান আলী বলেন, বাংলাদেশ হওয়ার আগে এই এলাকার জমি জমা বিক্রি হতো কাগজে সই স্বাক্ষর করে। ৫ হাজার টাকায় শতক বিক্রি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ হওয়ার পর একই জমি ৩৫-৪০ হাজার টাকা শতকে বিক্রি হচ্ছে। এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে।

সেখানকার ফরিদুল ইসলাম বলেন, কুমলাই নদীর নগর জিগাবাড়ি পয়েন্ট ব্যবহার করে চলাচল করতো তিন ছিটমহলের বাসিন্দা। ব্রিজ না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে এলাকাবাসীদের। এখন সেই দুর্ভোগ আর নেই। এখন আমরা ইউনিয়ন পরিষদে যাচ্ছি সেখানে জন্মনিবন্ধন কার্ড করতে পারছি। জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছি। এখন বৈধ নাগরিক হিসেবে সব সুবিধা নিতে পারছি।

ওই এলাকার স্কুলছাত্রী মীম আকতার বলেন, এখন আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। স্কুলে যেতে পারছি, পড়াশোনা করতে পারছি। আমরা পড়াশোনা শেষ করে ভালো কিছু করতে চাই। এই এলাকার মানুষরা অত্যন্ত গরীব, সংসারের খরচ মেটানো কষ্টকর, এর উপর আমাদের মত মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অবিভাবকদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এজন্য সরকারের বিশেষ কোনও পদক্ষেপ চাই যাতে আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করে নিজের খরচও বহন করতে পারি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় বলেন, সরকারি সকল নির্দেশনা অনুসরণ করে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের জন্য। উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুসারে এলাকাগুলোর কাজ করা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, এলজিইডি থেকে বিলুপ্ত ছিটমহলের উন্নয়নের জন্য বিশেষ একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং সড়ক সম্প্রসারণ ও মেরামত করা হবে। করোনার কারণে কাজটি শুরু হয়নি। তবে দ্রুতই তা শুরু হবে। খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি ও টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নে যুক্ত হয়েছে এই চার বিলুপ্ত ছিটমহল।

উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তিটি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এ ইতিহাস সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব আর মানবতার ইতিহাস। ৬৮ বছর ধরে যাদের রাষ্ট্র ছিল না, ছিল না পরিচয়, সবাই যাদের চিনতো ছিটমহলবাসী হিসেবে, আজ তারা তাদের জাতীয়তার পরিচয় পেয়েছে। পেয়েছে নাগরিকত্বের পরিচয়।

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর