ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে খুন হন স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী। তার নাম আখলাকুর রহমান ওরফে আখলাদ। ঘটনাটি ঘটে গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে সুনামগঞ্জের ছাতকে।
ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযান চালিয়ে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে ওসির কক্ষে নিয়ে ফেসবুক লাইভে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভিডিওটি সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায়। এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে সচেতন মহলে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ‘ছাতক টু সুনামগঞ্জ’ নামক একটি পেজে ওই লাইভ ভিডিওটি প্রচার করা হয়। লাইভ শুরুর পর পরই প্রায় ৫ হাজার মানুষ ভিডিওটি দেখেন।ওসির কক্ষ থেকে চেয়ারম্যান ফয়ছল আহমদের আইডি থেকে ‘ছাতক টু সুনামগঞ্জ’র ফেসবুক পেজে লাইভ শুরু হতেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। হত্যা মামলার আসামিকে লাইভে রেখে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্মিত সচেতন মহল।
সিলেট পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাবি, তারা ভিডিওটি দেখেননি, শোনেননি, জানেনও না। তবে খতিয়ে দেখে ঘটনা সত্য হলে ব্যবস্থা নেবেন।
আইনবিদরা বলছেন, ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের আসামিকে লাইভে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ গর্হিত অপরাধ। আসামির অপর সহযোগীদের তথ্য নেওয়া, রহস্য উদঘাটনের বদলে তদন্তকাজে বড় ধরনের ক্ষতির সমূহ আশঙ্কা থাকে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে আখলাকুর রহমান ওরফে আখলাদ (৩৫) নামের এক ব্যবসায়ী উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ বাজার থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে খুন হন। রাতেই গ্রামের মাঠের ক্ষেতের জমি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। আখলাদ গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাও ইউনিয়নের মোল্লা আতা গ্রামের জহির আলীর পুত্র ও গোবিন্দগঞ্জ বাজারের একজন ব্যবসায়ী।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ পৃথক অভিযানে একই ইউনিয়নের গোবিন্দনগর গ্রামের ফজলু মিয়ার ছেলে আবু সুফিয়ান সোহাগ ও বিশ্বনাথ উপজেলার দিঘলী-চাকলপাড়া গ্রামের আশরাফুল আলমের ছেলে আলীম উদ্দিনকে নিজ বাড়ি থেকে গত বুধবার রাতে গ্রেফতার করে।
বৃহস্পতিবার রাতে ছাতক থানার ওসি নাজিম উদ্দিনের কক্ষ থেকে আসামি আবু সুফিয়ান সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ফেসবুকে লাইভ করা হয়। ভিডিওতে গ্রেফতারকৃত আসামি ছাড়াও ছাতক থানার ওসি নাজিমউদ্দিন, গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমানসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়।
তবে ছাতক থানার ওসি নাজিম উদ্দিন ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, আমি এগুলো করিনি, অন্য কেউ হয়তো করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
‘ছাতক টু সুনামগঞ্জ’র ফেসবুক পেজে যে আইডি থেকে লাইভ প্রচার করা হয় সেই চেয়ারম্যান ফয়ছল আহমদও ঘটনা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তার পেজ থেকে এমন কিছু প্রচার করা হয়নি।
ঘটনার বিষয়ে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, আমি অবগত ছিলাম না, এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
আসামিকে ফেসবুক লাইভে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, গোপনীয়তা ভঙ্গ করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও তথ্য প্রযুক্তি আইনে গর্হিত অপরাধ। মামলার তদন্ত কার্যক্রমে জড়িত পুলিশ কর্তৃপক্ষকে কার্যক্রম নিরপেক্ষ রাখতে আরও সতর্ক থাকা উচিৎ ছিল।
বিডি প্রতিদিন/কালাম