২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৬:৩৯

শরীয়তপুরে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং, হাত বাড়ালেই মিলছে ভয়াবহ মাদক

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

শরীয়তপুরে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং, হাত বাড়ালেই মিলছে ভয়াবহ মাদক

শরীয়তপুরের কিশোররা ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ইভটিজিং, মাদক ব্যবসাসহ বড় অপরাধ ঘটছে তাদের দ্বারা। করোনাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। যে বয়সে শিশু-কিশোদের লেখাপড়া আর খেলাধুলায় মনোনিবেশ হওয়ার কথা সেই বয়সে তারা ফৌজদারি অপরাধের আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়ছে এই অঞ্চলের কিশোরদের আগামীর সম্ভাবনা। কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরালো কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে, সম্প্রতি কিছু ঘটনার সূত্র ধরে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, শহর থেকে গ্রামের চরাঞ্চল পর্যন্ত বেশিরভাগ এলাকায় বখাটেদের সঙ্গে স্থানীয় তরুণ-যুবকদের যোগাযোগে গড়ে উঠছে একাধিক গ্রুপ। আর এসব কিশোর যুবকদের আশ্রয় দিচ্ছে স্থানীয় কিছু কথিত প্রভাবশালী ব্যক্তি। এতে করে তাদের প্রভাব বিস্তারের মাত্রাও বেড়েছে কয়েকগুণ। তাদের এই প্রভাব বিস্তারের ফলে আক্রমণের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষসহ গণমাধ্যম কর্মীরাও। গত ২০ সেপ্টেম্বর জেলা শহরের পালং স্কুল সংলগ্ন এক গৃহবধূকে প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানি ও মারধর করে স্থানীয় নাজমুল বাহিনী গ্যাং। 

এছাড়াও অনেক সময় গ্রুপিংয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে উভয়পক্ষ এভাবেই জড়িয়ে পড়ছে সংঘর্ষে। যা শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিদিন ৪/৫টি সংঘর্ষ ও মারপিটে আহত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খাতায় এ সকল ঘটনায় (পুলিশ কেস) সিল করা থাকলেও সংশ্লিষ্ট থানায় এ নিয়ে বেশিরভাগ তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও পরবর্তীতে এরই সূত্র ধরে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

অন্যদিকে বর্তমানে শরীয়তপুর জেলা শহরের অলিতে গলিতে এইসব গ্যাং বাহিনীর মাধ্যমেই মিলছে মাদকের উপস্থিতি। পালং এলাকায় ইতিমধ্যে র্যাব-৮ এর কয়েকটি অভিযোনে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। ফলে ক্রমেই বেড়েই চলছে কিশোর ও যুবকদের ভয়াবতা। যদিও এসবের জন্য সামাজিক অবক্ষয়, আইনি দুর্বলতা, পরিবারের নজরদারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতাই মূল কারণ হিসেবে মনে করেন সচেতন মহল।

শরীয়তপুর প্রেসক্লাব সভাপতি অনল কুমার দে, শরীয়তপুর ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান খান ও সহ-সভাপতি মাহাবুবুর রহমারসহ অনেকে জানান, শরীয়তপুরে কিশোর গ্যাং বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এই গ্যাংয়ের লোকজন অলিগলিতে মাদক বিক্রি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত। এরপরও তারা ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকার বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। কয়েকদিন আগে এসকল গ্যাং বাহিনীর হাতে আমাদের একজন সহকর্মী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। কিন্তু মামলা হলেও পুলিশের আসামি গ্রেফতারে তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। তাদের এমন আচরণে আমাদের বিস্মিত ও ক্ষুব্দ করেছে। সকল গ্যাং বাহিনীকে শরীয়তপুর থেকে নির্মূল করতে পুলিশি অভিযান আরও জোরদার করার আহ্বান সকলের।

সদরের 'পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যদি কেউ কোনো এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় আমাদের কাছে সংবাদ আসে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে কিশোর গ্যাংকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ওসি।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান (পিপিএম) বলেন, মাদকসেবনকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। কিশোর গ্যাং যাতে সৃষ্টি না হয় সে জন্য সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছি। আর যারা অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েছে তাদেরকে আটক করার চেষ্টা চলছে। যারা সংঘর্ষে জড়াচ্ছে এবং যাদের কাছে মাদকদ্রব্য পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর