২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৬:২৬

পাটের বাম্পার ফলনে খুশি চাষিরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

পাটের বাম্পার ফলনে খুশি চাষিরা

পাট ছাড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারীরা।

বাংলাদেশের প্রকৃতি এবং জলবায়ু পাট ও পাট জাতীয় ফসল চাষাবাদের জন্য খুবই উপযোগী। দেশে উৎপাদিত পাটের শতকরা ৭০ ভাগ দেশেই ব্যবহার হয়, বাকি ৩০ ভাগ কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য হিসেবে রফতানি হয়। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদিত বেশির ভাগ পাটই উৎপাদন হয়ে থাকে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়।

চলতি মৌসুমে জেলায় ৩০৯৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু শিবগঞ্জেই চাষ হয়েছে ১৭০০ হেক্টর জমিতে। এদিকে এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে তোষা ও দেশি পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে পাট কাটা, পাট জাগ, আঁশ সংগ্রহ, খড়ি শুকানোসহ পাট পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিরা। চলতি মৌসুমে পাটের ভালো ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় খুশি চাষিরা।

কৃষকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার ফলন ও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মৌসুমের শুরুতে ভাল দামে খুশি চাষিরা। তবে পাট চাষিদের জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন তারা।

শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শিবগঞ্জ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে পাট চাষ হয়ে থাকে। এই উপজেলায় এ বছর ১৭০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ২২০০ বিঘা বেশি উৎপাদন হয়েছে। এখন উপজেলার বেশির ভাগ গ্রামে পাট জাগের গন্ধ নাকে ভেসে আসে। আঁশ সংরক্ষণ শেষে কেউ কেউ পাট বিক্রি শুরু করেছেন। এবছর প্রতি হেক্টর জমিতে দুই থেকে সোয়া দুই টন পাট উৎপাদিত হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। মৌসুমের শেষে এই পাটের মণ অন্তত সাত থেকে আট হাজার টাকা হবে বলে দাবি কৃষি কর্মকর্তাদের। তবে শুধু আঁশ ছাড়াও প্রতি বিঘা জমির পাটখড়ি বিক্রি হয় ৭ থেকে ১০ হাজার টাকায়।

পাট চাষি সেলিম আলী জানান, এ বছর দেড় বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছিলাম। ১০ কাঠার পাট কেটে বিক্রি করে দাম পেয়েছি ১৩ হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমির পাট কেটে আজ জাগ দিচ্ছি। এবার পাটের ফলন ও দাম বেশ ভালো। আশা করছি, এই এক বিঘা জমির পাটে প্রায় আরও ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পাব। আর আমার তিন বিঘা জমির পাট চাষে পাটে মোট খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা।

উপজেলার মুসলিমপুর এলাকার এরফান ফারুক জানান, পাট চাষে খরচ খুবই কম, তাই প্রতি বছর পাট চাষ করি। এবার তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। ফলন বেশি হওয়ায় সব কার্যক্রম শেষ করতে পারিনি। আজও এক বিঘা জমির পাট জাগ দিচ্ছি। আর দুই বিঘা জমির ২১ মণ পাট বিক্রি করেছি ২৭০০ টাকা মণ দরে।

রুবেল নামে আরও এক পাট চাষি জানান, তিনি ১২ কাঠা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন এ বছর। এতে পাট হয়েছে প্রায় ৫ মণ, বিক্রি করেছেন সাড়ে ১২ হাজার টাকায়। আর পাটখড়ি হয়েছে সাড়ে তিন মণ, বিক্রি করেছেন এক হাজার টাকায়।

কানসাটের হাসান আলী নামে এক পাট আড়তদার জানান, গত বছর এসময় পাট কিনেছিলাম ১২০০-১৩০০ টাকা মণ। এবার করছি ২৫০০-২৭০০ টাকা মণ দরে। আর পাটখড়ি ক্রয় করছি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা মণ দরে। পাটের দাম এ বছর প্রথম থেকেই ভালো।

শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. শরিফুল ইসলাম জানান, শিবগঞ্জ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে পাট চাষ হয়ে থাকে। এই উপজেলায় এবছর ১৭’শ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ২২’শ বিঘা বেশি উৎপাদন হয়েছে।

এ বিষয়ে  জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর জেলায় ৩০৯৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। জেলার ৫ উপজেলার মধ্যে সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় এবার পাট চাষ হয়েছে বেশি। গত বছর জেলায় পাট চাষ হয়েছিল ১৭৬৫ হেক্টর জমিতে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

সর্বশেষ খবর