১০ নভেম্বর, ২০২১ ১৩:৫১

শিক্ষকদের ৩২ মাসের বেতন বকেয়া : বিহারীদের একমাত্র স্কুলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

শিক্ষকদের ৩২ মাসের বেতন বকেয়া : বিহারীদের একমাত্র স্কুলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী বিহারী কলোনিতে ২ হাজার পরিবারের বসবাস। তাদের সন্তানেরা ওই কলোনিতে অবস্থিত আদমজী উম্মুল ক্বোরা হাই স্কুলে মাধ্যমিকের গণ্ডি শেষ করে। অধিকাংশ পরিবার আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল থাকায় চাইলেও অন্য স্কুলে তাদের সন্তানদের ভর্তি করাতে পারেন না। স্কুলটিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৯৯৫ জন।

সৌদি আরবের সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক রিলিফ অরগানাইজেশন (আইআইআরও) এর অনুদানের মাধ্যমে চলতো ওই স্কুলের কার্যক্রম। অর্থাৎ অনুদানের টাকায় শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অন্যান্য কর্মচারীরা বেতন পেতেন। এমনকি সংস্থার কাছ থেকে শিক্ষার্থীরাও শিক্ষা উপকরণসহ নানান সুযোগ-সুবিধা পেতো। কিন্তু গত ৩২ মাস ধরে অনুদান বন্ধ রয়েছে। যার কারণে শিক্ষক-কর্মচারীরা কোন বেতন ভাতাও পাচ্ছেন না।

জানা গেছে, ৩২ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রেখেই সংস্থার পক্ষ থেকে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সংস্থা থেকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, তারা আর কোনো অনুদান দিতে পারবেন না। এর ফলে স্কুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষকরা। তবে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এভাবে চলতে থাকলে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষকরা। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক রিলিফ অরগানাইজেশন (আইআইআরও) নামে একটি সংস্থার অনুদানের প্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালের ২৭ অক্টোবর স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছিল। পর্যায়ক্রমে তা দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান শুরু হয়। সংস্থাটির সহযোগিতা পাওয়ায় অসহায় পরিবারের সন্তানরাও স্কুলগামী হয়। প্রধান শিক্ষকসহ ১৪ জন শিক্ষক এবং একজন পিয়ন ও একজন দারোয়ানের বেতন সংস্থাটি দিয়ে আসছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বকেয়া হয়। এই বকেয়া রেখেই ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন চলমান রাখে সংস্থাটি। কিন্তু ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবার বেতন বকেয়া হয়।

কথা হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাকিম জয়নুল আবেদীনের সাথে। তিনি জানান, সংস্থা থেকে আমাদের ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে বেতন দেয়া হতো। শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে খণ্ডকালীন আরও ৯ জন শিক্ষক আমরা যুক্ত করেছি। তাদের বেতন শিক্ষার্থীদের সামান্য বেতন থেকে পরিশোধ করা হয়।

শিক্ষার্থীদের বেতন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, মাসে ২০০ টাকা করে বেতন। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী তা দিতে পারে না। এজন্য তাদের আমরা চাপ দেই না। বেতন না দিলেও আমরা তাদের ক্লাস করতে দেই এবং পরীক্ষার সুযোগ দেই।    

তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা জেলা শিক্ষা অফিস যেভাবেই হোক, আমি আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি আপনারা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচান।

এছাড়াও তিনি ওই সংস্থার কাছেও বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানান। সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে কেউই বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

জেলা শিক্ষা অফিসার শরীফুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে ডিসি স্যার ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা যদি বিষয়টি আমাদের নজরে আনে তাহলে আমরা ওয়ার্কপ্ল্যান করে দেখতে পারি।

বিডি প্রতিনিধি/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর