১০ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৬:৪৬

বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জুলি

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জুলি

জুলির হাতে শিশু একাডেমি পুরস্কার ও সনদপত্র তুলে দেওয়া হচ্ছে।

অদম্য ইচ্ছাশক্তি মানুষকে পৌঁছে দেয় স্বপ্নলোকে। আর এই ইচ্ছাশক্তির জোরেই শিশু একাডেমি পুরস্কার ও সনদের মতো অনন্য এক অর্জন ছিনিয়ে এনেছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (দৃষ্টি প্রতিবন্ধী) শিশু শিক্ষার্থী জুলি আক্তার। তার প্রতিবন্ধকতা তাকে থামিয়ে দেয়নি, বরং অনুপ্রেরণায় এগিয়ে নিয়েছে অনেক ধাপ। পড়াশোনায় মেধাবী জুলি ছবি আঁকাতেও পারদর্শী।

জুলি জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার চরপাকারদহ এলাকার জিয়াউল হকের মেয়ে। সে কালিয়াকৈর উপজেলার লতিফপুর এলাকার লতিফপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।

ওই বিদ্যালয়, উপজেলা শিক্ষা অফিস ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮/২০ বছর আগে জুলির বাবা জিয়াউল হক তার স্ত্রী শাহানাজ বেগম জীবিকার খোঁজে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আসেন। পরে উপজেলার শ্রীফলতলী বাইপাস এলাকার বাবরের বাসা ভাড়া নিয়ে তারা বসবাস করে আসছেন। এরই মধ্যে তাদের সংসারে জীবনে জিয়াসমিন আক্তার, জুলি আক্তার ও সাইম ইসলাম নামে তিন সন্তানের জন্ম হয়।

কিন্তু জুলি জন্ম থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তার ডান পাশের চোখে সমস্যা। জুলির বাবা জিয়াউল হক একজন হকার। তিনি ভাঙারি বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার ও ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বহন করেন। কিন্তু তার ইচ্ছা ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষিত করবে। জিয়াসমিন তার নানাবাড়ি ধামরাইয়ের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি, জুলি লতিফপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণি এবং তার ছোট ভাই সাইম শিশু শ্রেণিতে পড়ে। জুলি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও তার এই প্রতিবন্ধকতা তাকে থামিয়ে দেয়নি বরং এগিয়ে নিয়েছে অনেক ধাপ।

পড়াশোনায় মেধাবী জুলি ছবি আঁকাতেও পারদর্শী। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরেই শেখ রাসেল দিবস-২০২১ উদযাপন উপলক্ষে শিশু একাডেমি আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ‘ঘ’ বিভাগে গাজীপুর জেলা পর্যায়ে প্রথম ও ঢাকা বিভাগীয় পর্যায়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে জুলি। আর অনুপ্রেরণা, মমতা ও সহযোগীতা দিয়ে তাকে এগিয়ে নিচ্ছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তবে সকলের সহযোগিতায় আরও এগিয়ে যেতে চায় জুলি।

জুলির এই অনন্য অর্জনে খুশি তার বাবা জিয়াউল হক ও মা শাহানাজ বেগম। তারা বলেন, আমাদের অভাব-অনটনের সংসার হলেও তিন ছেলে-মেয়েকে সুশিক্ষিত করার ইচ্ছা আছে। এছাড়া আমরা গরিব মানুষ। ওরা লেখাপড়া করে চাকরি করবে এটাই আমাদের স্বপ্ন। তবে সরকার ও সকলের সহযোগিতা কামনা করছেন তারা।

ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জহুরা বেগম জানান, শিশু একাডেমির পুরস্কার ও সনদপত্র জুলির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ অনন্য অর্জনে জুলির সাথে অত্র বিদ্যালয়ও প্রসংশিত হয়েছে। শুধু জুলিই নয়, জুলিসহ এই বিদ্যালয়ে দৃষ্টি, শারীরিক ও বাধ-এই তিন ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন আটজন শিক্ষার্থী আছে। তবে তাদেরসহ অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে জলির এই অর্জনে প্রভাব পড়বে।

জুলির প্রতি বিশেষ অভিনন্দন ও শুভকামনা জানিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমিতা ইসলাম বলেন, জুলি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী হয়েও অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরেই সে ছিনিয়ে এনেছে অনন্য এক অর্জন। আর তাকে অনুপ্রেরণা ও মমতা দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন আমাদের শিক্ষকরা। তার অভিভাবকের প্রতিও কৃতজ্ঞতা, যারা জুলিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এভাবেই সবার আন্তরিক সহযোগিতায় এগিয়ে চলেছে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর