৭ এপ্রিল, ২০২২ ১৭:১৫

পাহাড়ে জমে উঠেছে বৈসাবি মেলা

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

পাহাড়ে জমে উঠেছে বৈসাবি মেলা

পার্বত্যাঞ্চলের ১০ ভাষাভাষী ১১টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বৈসাবি মেলা জমে উঠেছে। মেলা ঘিরে উৎসবের জোয়ার বইছে রাঙামাটিতে। বৃহস্পতিবার ছিল বৈসাবি মেলার চতুর্থ দিন। বিকাল ৩টা থেকে শুরু হয় বৈসাবি মেলার নানা আনুষ্ঠানিকতা। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যা তরুণ-তরুণীরা মেতে উঠেছে তাদের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলায়।

ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের গড়াই নৃত্য, তঞ্চঙ্গ্যা ঘিলা খেলা ও চাকমাদের ছিল বেম্ব খেলা।  খেলা দেখতে মেলাস্থলে ভিড় জমে পাহাড়ি-বাঙালীদের। সকল সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির মেল বন্ধনে এক আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি হয় রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইন্সটিটিউট চত্বরে।

অন্যদিকে বেচা-বিক্রি বেড়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৪৯টি স্টলে। দূর-দূরান্ত থেকে আসছে হাজারো দেশি-বিদেশি পর্যটক। সন্ধ্যা নামলে স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালীদেরও উপস্থিতিও থাকে চোখে পড়ার মত। পুরো মেলা জুড়ে আছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ইতিহাস ঐতিহ্য। তাদের পরিধানে পোশাক, বস্ত্র অলংকার, বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্য আর জীবন-জীবীকার সব সরঞ্জাম।

মেলায় কথা হয় সজল ত্রিপুরার সাথে। তিনি বলেন, বিগত ২ বছর করোনার জন্য পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা কোন উৎসবই পালন করতে পারেনি। কিন্তু এ বছর মনে হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি আগেরমত নেই। তাই পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের প্রাণের উৎসব বৈসাবি পালন করছে। বৈসাবির কারণে পাহাড়ে উৎসবের জোয়ার বইছে। 

পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের অগণিত নারী-পুরুষের ঢল নামতে শুরু করে মেলা স্থলে। সন্ধ্যা হলে জমে উপচে-পড়া ভিড়। মেলাকে ঘিরে পাহাড়ের বইছে আনন্দের বন্যা। পাহাড়ি-বাঙালিসহ সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সম্প্রীতির মিলন ক্ষেত্র রাঙামাটি। রাতে চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য-সঙ্গীত, চাকমা, বম, চাক, ত্রিপুরা ও মারমা সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। 

এ ব্যাপারে পাহাড়ি খেলাধুলা সমন্বয়কারী জানোন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, তঞ্চঙ্গ্যাদের খুব প্রিয় খেলা হচ্ছে ঘিলে খেলা। যুব যুব ধরে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে এ ঘিলে খেলা প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। তবে কালের পরির্বতনে এখন অনেকটা এ খেলা বিলুপ্তের পথে। তবে বৈসাবি আসলে এ চর্চা বেড়ে যায়। সবাই মেতে উঠে এ খেলায়।

অন্যদিকে মেলা চলাকালে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য রাঙামাটি প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা ও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে শুরু হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক উৎসব বৈসাবি মেলা। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে চালু রয়েছে এ প্রথা। তাছাড়া বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণ উপলক্ষে চৈত্র সংক্রান্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঘরে ঘরে পালন করা হয় বৈসাবি।

এ উৎসবকে চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাইং, ত্রিপুরারা বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু এবং অহমিকারা বিহু বলে আখ্যায়িত করে। চাকমা ভাষা ও রীতি অনুযায়ী ২৯ চৈত্র ফুল বিজু, ৩০ চৈত্র মূল বিজু ও ১লা বৈশাখ গোজ্যাপোজ্যা ও সাংগ্রাই পালন করে থাকে।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর