২১ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:০৫

তীব্র তাপদাহে সাতক্ষীরার উপকূল জুড়ে সুপেয় পানির হাহাকার

মনিরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা

তীব্র তাপদাহে সাতক্ষীরার উপকূল জুড়ে সুপেয় পানির হাহাকার

সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূল উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনি। এ দু’টি উপজেলায় প্রায় ৭ লক্ষ মানুষের বসবাস। এখানকার প্রধান সমস্যা বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট। গ্রীষ্মকাল আসলেই উপকূলজুড়ে প্রতি বছর রীতিমত এক ফোটা খাবার পানির জন্য চলে হাহাকার। উপকূলজুড়ে চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। কিন্তু কোথাও খাবার পানি নেই, সবটাই লবণাক্ত লোনা পানি। 

চৈত্রের খরায় আগে থেকে প্রাকৃতিক উৎসগুলো শুকিয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, নদ-নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে সুপেয় পানির আধার নষ্ট হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে মিলছে না সুপেয় পানি। বর্ষা মৌসুমে ধরে রাখা খাবার পানির পুকুরগুলো অনেক আগে থেকে শুকিয়ে পানি শূন্য হয়ে গেছে। ফলে বৈশাখের শুরু থেকে প্রখর রোদ্র আর তীব্র তাপদাহে উপকূলবাসী এক ফোটা সুপেয় পানির জন্য হাঁসফাঁস করছে। 

পানির জন্য গৃহিণীসহ অন্যান্য সদস্যরা কলস কাকে নিয়ে মাইলকি মাইল পায়ে হেটে পানির সন্ধান করে তা সংগ্রহ করছে। এচিত্র আশাশুনি ও শ্যামনগর বাসীর প্রতি বছরকার। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার পর থেকে দীর্ঘ ১১ বছর যাবত চলতে থাকা এ সমস্যা দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদ সাতক্ষীরার উপকূল মানুষের মধ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এখনো উপকূলের যে সব পুকুরে যৎসামান্য ধরে রাখা আকাশের জল রয়েছে সে সমস্ত পানির উৎস থেকে এক কলস সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে এ অঞ্চলের নারী-পুরুষ ও শিশুদের। 

সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে এক কলস পানি সংগ্রহ করতে হয় তাদের। পানি সংগ্রহের জন্য কোন সময় একটি দিনও পার হয়ে যায় তাদের। অনেকে সুপেয় পানির অভাবে নিত্যদিনের কাজে লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। উপকূলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশুদ্ধ পানি সংকটে টাইফয়েড, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী সাতক্ষীরার ১৩ শতাংশ মানুষ খাবার পানির সংকটে রয়েছে বলে জানানো হলেও বাস্তবে এই চিত্র আরও ভয়াবহ। পানি সংকট নিরসনে সরকারি-বেসরকারি জিও এনজিওর উদ্যোগে উপকূলজুড়ে খাবার পানির জন্য পুকুর খনন, টিউবওয়েল স্থাপন, পন্ডস এন্ড ফিল্টার (পিএসএফ) স্থাপন এবং বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করলেও কোন ভাবেই সুপেয় পানির সংকট দূর হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লির্ডাস, ব্রেড ফর দ্যা ওয়ার্ল্ডসহ জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের তথ্যমতে, ‘সাতক্ষীরা জেলার ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮১ জন মানুষের ভিতরে উপকূলের ৫ লক্ষাধিক মানুষ সুপেয় পানির সংকটে রয়েছে। সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি লিটার পানিতে ০ থেকে ১ হাজার মিলিগ্রাম লবণ থাকলে সেই পানি পানযোগ্য। কিন্তু উপকূলে প্রতি লিটার পানিতে ১ হাজার থেকে ১০ হাজার মিলিগ্রাম লবণ রয়েছে। এ কারণে সুপেয় পানির সংকট দূর করতে জেলার ১৩২টি পুকুরের মধ্যে ৭৩টি পুনঃখনন হয়েছে। যেসব এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপন করা দরকার সেখানে নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। 

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় আইলার সময় নদীর প্রলয়ঙ্করী জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এখানকার সুপেয় পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে এ অঞ্চলে দেখা দেয় তীব্র খাবার পানির সংকট। সংকট নিরসনে সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকূপ ও পানির বড় ট্যাংকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলাকায় পুকুর খননের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৃষ্টি হলে কিছুটা হলেও এ সমস্যা দূর হবে।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর