১০ আগস্ট, ২০২২ ২০:৫১
কুমেক হাসপাতাল

কবে সারবে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট ও দালালদের দৌরাত্ম্য

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কবে সারবে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট ও দালালদের দৌরাত্ম্য

ফাইল ছবি

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট ও দালাল রোগে আক্রান্ত। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সমস্যায় দুর্ভোগে পড়ছেন রোগীরা। এদিকে বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ। ৫০০ বেডের স্থলে রোগী থাকছে ১১০০। ফ্লোরে চলছে চিকিৎসা।

রোগী, স্বজন এবং হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ সালে এই হাসপাতাল ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালে এটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত হয়। তবে জনবল ৫০০ শয্যার দেওয়া হয়নি। এখানে প্রতিদিন ১১০০ রোগী ভর্তি হয়। আউটডোরে চিকিৎসা নেন প্রতিদিন ২০০০- ২৫০০ রোগী। তাদের সেবা দিতে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখানে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষীপুর ও নোয়াখালী অঞ্চলের স্বল্প আয়ের রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতালটিতে জনবলের ৭০৮টি অনুমোদিত পদ রয়েছে, যা ৫০০ শয্যার জন্য পর্যাপ্ত নয়। তার উপরে সেখান থেকে শূন্য রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অনেক পদ।

হাসপাতালের সামনের কয়েকটি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফার্মেসির দালাল ও অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের উপদ্রবে অতিষ্ঠ রোগী ও তাদের স্বজনরা। শহরে এক কিলোমিটার পথের জন্য কিছু অ্যাম্বুলেন্স চালকরা নিচ্ছেন ৫ হাজার টাকা। কিছু চিকিৎসক, দুইজন ওয়ার্ড মাস্টার ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগের কিছু কর্মী দালালদের সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মেডিসিন বিভাগের ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বারেরা গ্রামের সুমাইয়া খাতুন। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে ভর্তি হয়েছি। পথের পাশে ফ্লোরে থাকছি। কে কি নিয়ে যায়, সেই চিন্তায় ঠিকমতো ঘুমানো যায় না। একটি সিট পেলে সুবিধা হতো।

সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সিটে রোগী। সিটের পাশে ফ্লোরে রোগী। হাসপাতালের হাঁটার পথে রোগী। কম জায়গায় বেশি রোগী রাখায় ঘিঞ্জি পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। মাথার উপর ফ্যান ঘুরলেও সেখানে মানুষের গায়ের গরমে দাঁড়ানো দায়। নতুন ভবনের নিচতলায় টিকিট কাউন্টারের সামনে এক ক্লিনিক স্টাফকে ঘুরতে দেখা যায়। তিনি সরল লোকদের টার্গেট করে প্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেন। চিকিৎসকের রুমের সামনে গিয়ে সহকারীকে তার রোগীর আগে সিরিয়াল দেওয়ার কথা বলেন। রোগী চিকিৎসকের রুম থেকে বেরিয়ে এলে তার প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে জানান, সরকারি হাসপাতালে ভালো পরীক্ষা হয় না। কম দামে তার পরিচিত ক্লিনিকে পরীক্ষা হয়।

ক্রীড়া সংগঠক বদরুল হুদা জেনু বলেন, সম্প্রতি আমার একজন স্বজন কুমেক হাসপাতালে মারা যান। তার মরদেহ আনতে নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে বাধা দেয় অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। তাদের লোকদের বাইরে কারো অ্যাম্বুলেন্স এখানে প্রবেশ করতে পারবে না।

সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান বলেন, আমরা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছি। পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি হাসপাতাল প্রশাসন আগের থেকে সেবা প্রদানে আন্তরিক। তবে রোগী বেশি হওয়ায় তারা সেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চিকিৎসক জানান, কিছু ব্রাদার, ওয়ার্ড বয় ও নার্স খুব প্রভাবশালী। তাদের দিয়ে কাজ করানো কঠিন। তারা বিভিন্ন ভাইয়ের লোক বলে কর্মকর্তাদের ভয় দেখায়। তারা বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত। আরো চিকিৎক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বাড়ানো প্রয়োজন। একজন চিকিৎসক বেশি রোগী দেখলে কোয়ালিটি সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। অনেক চিকিৎসকের ওয়াশরুম নেই। নারী চিকিৎসকরাও রোগীর টয়লেট ব্যবহার করেন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কম থাকায় হাসপাতালের পরিবেশের সাথে ওয়াশরুমের পরিবেশও অপরিচ্ছন্ন।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন বলেন, এই হাসপাতালে বেড সংকট রয়েছে। এক হাজার বেডে উন্নীত করা ও সে নিরিখে জনবল দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত আমাদের বেড সংকট কেটে যাবে। এই হাসপাতালে জেলার সেরা যন্ত্রপাতি রয়েছে। রোগীদের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। দালাল ও অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের নিকট মানুষ জিম্মি এটা সত্য। এই বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর