১২ আগস্ট, ২০২২ ১৯:৫০

উদ্বোধনের আগেই নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালের কোটি টাকার যন্ত্রপাতি

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

উদ্বোধনের আগেই নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালের কোটি টাকার যন্ত্রপাতি

মাদারীপুর সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নতিকরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে সুদৃশ্য ভবন। কেনা হয়েছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। উদ্বোধনের আগেই অযত্ন অবহেলায় সেই যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় ভেঙে গেছে নবনির্মিত হাসপাতালের দরজা ও জানালা। 

দ্রুত হাসপাতাল চালুসহ যাদের অবহেলায় যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। মাদারীপুর স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, জনবল সংকটের কারণে শুরু করা যাচ্ছে না মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নতুন ভবনের কার্যক্রম। তবে দ্রুতই হাসপাতাল চালু করা হবে। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ শেষ করা হয় মাদারীপুর সদর হাসপাতালের নতুন ভবন। রোগীর সেবার জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে তৈরি করা হয় ভবন। কেনা হয় কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। শুধু সিটি স্ক্যান মেশিনই কেনা হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা দিয়ে। এছাড়াও ডিজিটাল এক্সে মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন, আধুনিক জেনারেটরসহ কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে হাসপাতালের নতুন ভবনে। ব্যবহার না করা এবং অযত্ন অবহেলায় অধিকাংশ যন্ত্রপাতি নষ্টের উপক্রম। 

সরেজমিনে জানা গেছে, নানা সংকটে জর্জরিত মাদারীপুর সদর হাসপাতাল। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক। অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানের অভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না আধুনিক যন্ত্রাপাতি। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। এতে চরম বিপাকে পড়ছেন রোগীরা। তিনবছর আগে ২৫০ শয্যায় উন্নিতকরণের লক্ষে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। তবে শুরু হয়নি ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম। 

হাসপাতালটি বর্তমানে ১০০ শয্যার হলেও জনবল রয়েছে ৫০ শয্যারও কম। সংশ্লিষ্ঠ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন চিকিৎসক সংকট ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিসহ নানা সমস্যায় ব্যাহত হচ্ছে সদর হাসপাতালের কার্যক্রম। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি না করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা অন্য কোনো বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে নেই কোনো চক্ষু বিশেষজ্ঞ, রেডিওলজিস্ট। হাসপাতালে দক্ষ টেকনিশিয়ান না থাকায় করা যাচ্ছে না আলট্রাসোনোগ্রাম ও উন্নতমানের পরীক্ষা, নষ্ট হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। 

রোগীদের অভিযোগ চিকিৎসকরা নিয়মিত রোগীও দেখেন না। হাসপাতালের মূল্যবান যন্ত্রপাতির উপর পড়ছে পানি। ভেঙে গেছে হাসপাতালের দরজা-জানালা। ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্য দরকার ২৬৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারি। রয়েছে মাত্র ১৩৩ জন। স্থানীয়রা দাবি জানিয়েছেন দ্রুত হাসপাতাল চালু করার। স্থানীয় বাসিন্দা তাজুল ইসলাম জানান, যাদের অবহেলায় যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে তাদের বিচার করা হোক। আরেক বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, হাসপাতালটি চালু না হওয়াতে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয়রা। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। তাই হাসপাতাল চালুর দাবি জানাই। 

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মাসুদ পারভেজ বলেন, মূল্যবান সিটি স্ক্যান মেশিনসহ বিভিন্ন ধরনের মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই এটা দ্রুত চালু হোক। এতে করে আমাদের সেবার মান বাড়বে, কমবে ভোগান্তি।

মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মুনির আহমেদ খান বলেন, জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালের নতুন ভবনের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। তবে আপাতত নতুন ভবনে ৫০ বেডের কার্যক্রম আগামী দুই মাসের মধ্যেই শুরু হবে এবং নষ্ট যন্ত্রপাতি মেরামত করা হবে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর