শিরোনাম
২০ আগস্ট, ২০২২ ২১:৪৩

প্রক্সি পরীক্ষা ও নিয়োগ প্রতারক কে এই মাহবুব

শেরপুর প্রতিনিধি

প্রক্সি পরীক্ষা ও নিয়োগ প্রতারক কে এই মাহবুব

অভিযুক্ত মাহবুব

সরকারি চাকুরির প্রক্সি পরীক্ষা, বীর মুক্তিযোদ্ধদের ভুয়া আত্মীয় বানিয়ে কোটার সুবিধা নেওয়া ও নিয়োগ জালিয়াতির চক্রের হোতা শেরপুর শ্রীবরদীর মাহবুবকে গ্রেফতার করেছে ময়মনসিংহ মডেল থানা পুলিশ। 

মাহবুবের বাবা পেশায় একজন ইলেট্রিক মিস্ত্রী। মাহবুবের বাড়ী শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার উত্তর শ্রীবরদী কলেজ সংলগ্ন এবং তিনি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার কারণে দীর্ঘদিন থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে আছেন। ছাত্র জীবন থেকেই মাহবুব মেধাবি ও চতুর। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি চারটি বিয়েও করেছেন। 

সংশ্লিষ্ট খবর- প্রক্সি পরীক্ষা ও নিয়োগ প্রতারক চক্রের সদস্য মাহবুব গ্রেফতার

স্থানীয়রা জানিয়েছে, এই মাহবুব এসব জালিয়াতির কারণে প্রক্সি পরীক্ষা দিতে গিয়ে আরও অন্তত ৭/৮ বার ধরা পড়েছে। কখনও মুচলেকা কখনও জেল হাজাত খেটে আবারও আগের পেশায় ফিরেছেন। বাবা মিস্ত্রী, নিজে সাময়িক বরখাস্ত। এক সময়ে অভাবে থাকা এই মাহবুব এখন শ্রীবরদী শহরের কয়েক কোটি টাকার জমির মালিক।    
 
সরজমিনে জানা গেছে, সারা দেশে এই চক্রের শক্তিশালি নেটওয়ার্ক আছে। এই নেটের সাথে জড়িত রয়েছে সরকারি বেশ কিছু কর্মকর্তা, কর্মচারি, সরকার দলীয় রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধি। নেটওয়ার্কের কেউ বিপদে পড়লে উপর মহলের অদৃশ্য ইশারায় ওই বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগীরা বলেছেন, পরীক্ষা হলে কোনো সমস্যা হলে প্রার্থী, প্রক্সি প্রার্থীকে ওই চক্রের প্রভাবশালীরা ছোঁ মেরে পরীক্ষা হল থেকে উঠিয়ে নিয়ে তাৎক্ষণিক বিপদ থেকে রক্ষা করে। 

আকিবুল ইসলাম নামে এক প্রার্থীকে মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া নাতি বানিয়ে গাজীপুরের ঠিকানা ব্যবহার করে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তার চাকুরি পাইয়ে দেয় এই মাহবুব। পরে ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিবার চ্যালেঞ্জ করলে তদন্তে আকিব বরখাস্ত হন। ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে নানা ভাবে হয়রানির করা হয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা খবর প্রকাশ করলে বাজারে প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এনিয়ে আতংকিত স্থানীয় সাংবাদিকরা ২০১৭ সালে শ্রীবরদী থানায় ডিজি করতে বাধ্য হন। 

স্থানীয়রা আরও জানিয়েছেন, সারা দেশে মাহবুবের অন্তত ২০টি বাড়ি আছে। যে অঞ্চলের চাকরির আসন বেশি বা খালি থাকে সেই অঞ্চলের নিজের (মাহবুবের বাড়ী) বাড়ির ঠিকানা দেখিয়ে আইডি বানিয়ে পরীক্ষার্থীদের ওই ঠিকানা থেকে আবেদন করানো হয়। কন্ট্রাক করা চাকরি প্রার্থীদের সাথে ডিজিটাল কৌশল ও অর্থের বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট অফিসের কাউকে ম্যানেজ করে লিখিত পরীক্ষায় চাকরি প্রার্থীর প্রক্সি দেয়া মেধাবি শিক্ষার্থীদের আসন এক সাথে বসানো হয়। ডামি প্রাথী ও আসল প্রার্থীদের সমন্বয় করতে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে একজনের প্রবেশ পত্রে নিজের ছবি লাগিয়ে বসে যান পরীক্ষা হলে। এই সমগ্র প্রক্রিয়ার সাথে দেশে কিছু মেধাবি শিক্ষাথীও জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। 

সূত্র জানায় এই সিন্ডেকেটের অন্যতম সদস্য মনিরুজ্জামান মনির অডিট কর্মকর্তা (এফপিও)। ইংরেজীতে অনার্স মাষ্টার্স করা অত্যন্ত মেধাবি তিনি। মনিরের কর্মস্থল ঘাটাইলে। মেধাবি শিক্ষার্থী জোগাড় করে পরীক্ষা হল পর্যন্ত পৌছে দেওয়ার কাজটি করেন এই মনির। মনিরের বাবা একজন কাঠমিস্ত্রী। সাম্প্রতিক অর্থ বৃত্তে জমি জমায় মনির এলাকায় বেশ প্রভাবশালী। স্থানীয়রা মনিরের হঠাৎ অনেক টাকার মালিক হয়ে তার জীবনযাপন বদলে যাওয়াতেও বেশ সন্দেহের চোখে দেখছেন। মাহবুব- মনিরের পরিবারে অন্তত ২৫ জন সরকারি চাকরিতে রয়েছেন।  

তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে মোবাইলে মনিরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, এসব মিথ্যে, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

এদিকে মামলার অন্যতম বিবাদী মূল পরীক্ষার্থী আহসান উল্লাহ শেরপুর শহরের সিংপাড়া বাড়ি থেকে গাঁ ঢাকা দিয়েছে। তাকে পুলিশ কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না।

এবিষয়ে ময়মনসিংহ মডেল কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম (বার) জানায়, আগামী সপ্তাহের মধ্যে মাহবুবকে রিমান্ডে নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে মাহবুবকে জিজ্ঞাসাবাদে ওই চক্রের সাথে আর কে কে জড়িত তা জানা যাবে।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর