দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেছেন, দেশের উন্নয়নে বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময় দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নেয়। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হওয়া তেমনই এক দুঃসাহসিক পদক্ষেপ। এর মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
রবিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের পাঁচতারা হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউয়ে সিএসই ও এবিজি লিমিটেডের মধ্যে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, পঁচাত্তরের কালরাতে ঘাতকের বুলেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নৃশংসভাবে খুন হলে বাঙালি জাতি দিশা হারিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সমস্ত স্বপ্ন এক এক করে পূরণ করে যাচ্ছেন।তিনি বলেন, ‘সময়ের আগে হোক বা পরে, আমাদের দুঃসাহসিক অভিযান সব সময় চলেছে। এ দেশের উন্নয়নে আমরা সব সময় সজাগ থাকব।
বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে গোল্ড রিফাইনারির উদ্যোগ নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরেও কেউ এ ধরনের দুঃসাহস দেখাতে পারেনি। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সময় গোল্ড রিফাইনারির কথা বললেও কেউ সাহস করেনি। বসুন্ধরা গ্রুপ তা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এটি পোশাকশিল্পকেও ছাড়িয়ে যাবে। বিদেশে অনেক বেশি রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, ‘এবিজি লিমিটেড স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হলো। আমার বিশ্বাস, দেশের অন্তত ১০০টি গ্রুপ চাইলে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারে। তারাও যাতে এগিয়ে আসে। দুঃখের বিষয় হলো, অনেকে বিদেশে টাকা জমিয়ে রেখেছে। তাতে দেশের কোনো উন্নতি হয় না। অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসলেও তারা সব কিছু নিয়ে যায়। তারা এ দেশকে স্বাবলম্বী করতে পারবে না। দেশের বিনিয়োগকারীরাই তা পারবে। তাদের দেশের প্রতি একটা মায়া আছে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন এ উদ্যোগ নিয়ে এবিজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে আলাপ করেছি, তোমার পরিকল্পনা কী? তার উত্তর, আমরা সব কিছু ইউরোপ, আমেরিকা থেকে আনব। এটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।’
পর্যটন খাতের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এ খাতে আমাদের অনেক কিছু করার আছে। এসব জায়গায় আমাদের বিনিয়োগ করা উচিত। সেখান থেকে বিপুল সংখ্যক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।’
বসুন্ধরা চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘ব্যবসায়ীরাই হলেন সমস্ত শক্তির মূল। প্রধানমন্ত্রীও ব্যবসায়ীদের সম্মান করেন। উনি সার্বক্ষণিক ব্যবসায়ীদের খোঁজখবর রাখেন। ফলে গত ১৪ বছরে ব্যবসায়ীরা কোনো রকম বাধা-বিপত্তিতে পড়েনি। প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে বলার পর উনি সব সময়ই এগিয়ে এসেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াওয়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তলানিতে চলে যাচ্ছিল। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও আগুনের খবর পাওয়া যেত। আমরা গালে হাত দিয়ে বসে থাকতাম, কবে কারখানা চালাব এ আশায়। সেই জামায়াত-শিবির ও দেশবিরোধী চক্র এখনো থেমে নেই। তারা সব সময় বিদেশে বসে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত। আজকের বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতার পেছনেও তারা দায়ী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত এগুলোকে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা।’
ডলার নিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখনো ব্যাংকে পর্যাপ্ত সঞ্চয় রয়েছে। আমাদের অর্থনীতি এখন অনেক শক্তিশালী। ১৪ বছরে আমাদের ডলারের মূল্য বেড়েছে মাত্র ১০ টাকা। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকটের কারণে ডলার নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। তবু আমি বলব আজকের এই পরিস্থিতিতেও সঠিক নেতৃত্বের কারণে আমরা পথ হারাইনি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের চেহারাই বদলে গেছে।’
এই চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে সিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী (স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার) হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে এবিজি লিমিটেড। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পাঁচতারা হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউয়ে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তি সই অনুষ্ঠান চলছে। সিএসইর পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. গোলাম ফারুক এবং এবিজি লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর চুক্তিতে সই করবেন।
এবিজি লিমিটেড দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। সিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কেনার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এই পুঁজিবাজারের মালিকানায় কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলো। এখন থেকে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে এবিজি লিমিটেড কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, দেশের পুঁজিবাজারে সার্বিক উন্নয়ন ও কার্যকরী সমৃদ্ধি আনয়নের লক্ষ্যে এবিজি লিমিটেড বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। যা পুঁজিবাজারকে আরো সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।
চুক্তি সই উপলক্ষে আয়োজিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং বসুন্ধরা গ্রুপের মহীরুহ স্বপ্নদ্রষ্টা চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছেন সিএসই চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন বসুন্ধরা গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহান।
১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সিএসই পরিশোধিত মূলধন ৬৩৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং শেয়ারের সংখ্যা ৬৩ কোটি ৪৫ লাখ। ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করতে হবে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে আর ৩৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করতে হবে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। এই হিসাবে প্রায় ১৬ কোটি শেয়ার বিক্রি করতে হবে তাদের। ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য সিএসই তার শেয়ারহোল্ডারদের ৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।