২১ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৭:৫৩

বিলুপ্তির পথে পাহাড়ের গৃহনির্মাণ সামগ্রী শণ

মো. জহুরুল আলম, খাগড়াছড়ি

বিলুপ্তির পথে পাহাড়ের গৃহনির্মাণ সামগ্রী শণ

পাহাড়ের শণ এখন বিলুপ্তির পথে। শণ গৃহনির্মাণের জন্য এককালে এখানকার প্রধান নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পাহাড়ের উঁচু-নিচু ঢালুতে এসব শণ উৎপাদন হতো। কোনো রকম পরিচর্যা ছাড়াই এসব শণে পাহাড় টিলা ভরে যেতো।

শুষ্ক মৌসুম এলেই তা পরিপক্কতা পেতো। পরে তা কেটে শুকিয়ে হাট-বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হতো। ক্রেতারা তা কিনে ঘরের চালার প্রধান সামগ্রী বা উপকরণ হিসেবে ছাউনি দিয়ে ঘর নির্মাণ করতেন। তবে কালের পরিক্রমায় আজ বিলুপ্তির পথে।

দূর কোনো পাহাড়ে এখনো কিছু কিছু জায়গায় এসব শণ বাগানের দেখা মিলে। জেলার মানিকছড়ি, লক্ষিছড়ি, পানছড়ি ও দিঘীনালা উপজেলার দুর্গম এলাকায় এসব শণের বাগান রয়েছে। দূর গ্রামে এখনো শণের ছাউনি দিয়ে ঘরের দেখা মেলে। তবে শহরে এলাকায় তা একেবারেই নেই।

উন্নত প্রযুক্তির এই সময়ে টিন দিয়ে এখানকার পাহাড়ি লোকজন ঘর তৈরি করে বসবাস করে। নতুন প্রজন্মের কাছে শণের তৈরি ঘর এক উদ্ভাবনী আবিষ্কার বলে মনে হতে পারে। কিন্তু পুরনো লোকজন অনায়াসে এসব শণের তৈরি ঘর চিনতে পারবে। শণের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখানে পর্যটন এলাকায় কোনো কোনো রেস্তোরাঁ ও কটেজ শণ দিয়ে তৈরি হয়। মূলত পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য তা তৈরি করা হয়।

পাহাড়ে শণ বিক্রি করতে আসা মানিকছড়ির থৈয়সু ত্রিপুরা জানান, দূর পাহাড় থেকে এসব শণ কেটে এনে তা শুকিয়ে বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে এসেছি। দুই আঁটি করে বেঁধে কাঁধে বহন করে নিয়ে আসা শণের বোজা বিক্রি হচ্ছে খুব চড়া মূল্যে। অনেকে শখ করে গোলঘর কিংবা পর্যটকদের জন্য ছাতার মতো করে শণ দিয়ে ঘর তৈরি করার জন্য এসব কিনে নিয়ে যায়। এককালের ঘরের প্রধান নির্মাণ সামগ্রী এখন শখের সামগ্রীতে পরিণত হয়েছে।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কৃষিবিদ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুক্তা চাকমা জানান, শণ প্রাকৃতিক উপায়ে এখানকার বনে-জঙ্গলে জন্মাতো। গৃহনির্মাণের প্রধান সামগ্রী ছিল শণ। বর্তমানে শণ জন্মানো জায়গাগুলোতে আম ও লিচুসহ নানা ফলের বাগানে রূপ নিয়েছে। তাই এই সামগ্রী এখন বিলুপ্তির পথে।

তিনি আরো জানান, কৃষি বিভাগ থেকে কোনো প্রকার নির্দেশনা না থাকায় এখানে আর শণ উৎপাদনের বিষয়টা ভাবা হচ্ছে না। তাই ঐতিহ্যবাহী শণ আর মিলছে না।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর