২৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ১২:৪৫
মঞ্চে থাকবেন কাদের সিদ্দিকী ও লতিফ সিদ্দিকী

কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমাদানের ৫০ বছরপূর্তি কাল

মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল

কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমাদানের ৫০ বছরপূর্তি কাল

বঙ্গবন্ধুর পদতলে কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমাদান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদতলে কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমাদানের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে আগামীকাল ২৪ জানুয়ারি স্থানীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমাদান উদযাপন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন ‘৭১ এর কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। এসময় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী উপস্থিত থাকবেন।

১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। টাঙ্গাইল জেলাসহ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য এই দিনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট অস্ত্র জমা দেন মুক্তিযুদ্ধে কাদেরীয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। 

টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাহিনীর পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র তুলে দেন তিনি। পূর্ণতা পায় মুক্তিকামী টাঙ্গাইলবাসীর আরেকটি অধ্যায়ের। কাদের সিদ্দিকী তাঁর লেখা স্বাধীনতা ৭১ গ্রন্থের ৬০৬ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘অস্ত্র হস্তান্তর’ শিরোনামে সেদিনের বিষয়াবলী লিপিবদ্ধ করেছেন। 

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম তার বইয়ে লিখেছেন ঘড়ির কাঁটা ১১টা ৩০ মিনিটের ঘরে। বঙ্গবন্ধুকে বিন্দুবাসিনী স্কুল মাঠে অস্ত্র জমা দেওয়ার মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হলো। অস্ত্র জমা দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা হিসাবে নানা ধরনের হাজার দশেক হাতিয়ার বিন্দুবাসিনী স্কুল মাঠে সারি করে দাঁড় করা ছিল। তিন হাজার সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সামনে মাঠের একপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ও আমি মঞ্চে উঠতেই প্যারেড কমান্ডার মেজর আব্দুল হাকিম মাঠে দাঁড়ানো মুক্তিযোদ্ধাদের সতর্ক করল এবং সশস্ত্র অভিবাদন জানাল। পরে আনুষ্ঠানিকতা সেরে হাঁটু গেড়ে বহুদিনের বহু লড়াইয়ের স্মৃতিবিজড়িত স্টেনগানটি বঙ্গবন্ধুর পায়ের সামনে রাখলাম। ২৪ জানুয়ারির ঐতিহাসিক দিনের চিত্রগুলো মুক্তিযোদ্ধাগণ আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। 

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলসহ দেশকে স্বাধীন করার দৃঢ় প্রত্যয়ে প্রায় ১৭ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও বিপুলসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকের সমন্বয়ে কাদের সিদ্দিকী গঠন করেন একটি গেরিলা বাহিনী। কাদের সিদ্দিকী বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হওয়ায় বাহিনীটি ‘কাদেরীয়া বাহিনী’ নামে সুপরিচিত। কাদেরীয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা ১১নং সেক্টরে কমপক্ষে তিন শতাধিক ভয়াবহ সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং প্রায় ৩ হাজার হানাদার সদস্য হত্যা করেন। কাদের সিদ্দিকী নিজে ৩০টিরও বেশি সম্মুখযুদ্ধে সরাসরি নেতৃত্ব দেন। ফলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীসহ আলবদর, আলশামস, রাজাকারদের নিকট আতংকের নাম ছিল কাদেরীয়া বাহিনী। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর কাদেরীয়া বাহিনীর সহায়তায় কালিহাতী উপজেলার পৌলীতে ভারতীয় ছত্রীসেনা অবতরণ করে। ১১ ডিসেম্বর কাদেরীয়া বাহিনীর নেতৃত্বে টাঙ্গাইল হানাদারমুক্ত হয়। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য কাদের সিদ্দিকীকে বঙ্গবন্ধুর সরকার বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত করেন। খেতাব নং-৬৮ (গণবাহিনী), সেক্টর নং- ১১।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী মণি খন্দকার বলেন, ২৪ জানুয়ারি সত্যি আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। কেননা আমরা যে মহান নেতার ডাকে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলাম, আবার সেই নেতার পদতলে আমাদের সবার পক্ষে কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম অস্ত্র জমা দেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন দেশে ফিরেন। এরপরেই রাজধানী ঢাকার বাইরে প্রথম টাঙ্গাইলে আসেন। মুক্তিযোদ্ধাগণ বলেন, বাংলাদেশ নামের একটি ভূখণ্ড যতদিন পৃথিবীর মানচিত্রে থাকবে ততদিন দেশে-বিদেশে স্বর্ণাক্ষরে জ্বলজ্বল করবে কাদেরীয়া বাহিনীর নাম ও ২৪ জানুয়ারির অস্ত্র সমর্পণের ইতিহাস।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খোকা বীরপ্রতীক জানান, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, কবি আল মুজাহিদীসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকজনের সমাগম ঘটবে এই অনুষ্ঠানে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষেই এ সমাবেশ।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর