২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ২০:৩১

সুপারি চুরির অপবাদে বাবা-ছেলেকে শিকলে বেঁধে রাতভর নির্যাতন!

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

সুপারি চুরির অপবাদে বাবা-ছেলেকে শিকলে বেঁধে রাতভর নির্যাতন!

ঝালকাঠির নলছিটিতে সুপারি চুরির অপবাদে শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে ১১ বছরের এক শিশুকে তার বাবাসহ নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ১১ ঘণ্টা শিকলে বেঁধে বাবা-ছেলেকে মারধরের পর আজ সোমবার সকাল ১০টায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। উপজেলার রানাপাশা ইউনিয়নের তেতুলবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, রবিবার রাত ১১দিকে ওই গ্রামের লতিফ খানের বাড়ির আঙিনায় শুকিয়ে মজুদ করে রাখা দুই কুড়ি (৪২০টি) সুপারি চুরির ঘটনা ঘটে। শিশু ছাব্বিরের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগে এনে তাকে ও তার বাবা মো. বাবুল হাওলাদারকে বাড়ি থেকে আটক লতিফ খানের বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর লতিফ খান ও স্থানীয় কয়েকজন মিলে বাড়ির উঠানে আমড়া গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় ওই দুজনের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। রাত ১২টার দিকে আব্বাস হাওলাদার নামে স্থানীয় এক মাংস বিক্রেতা কাঁচি দিয়ে ওই শিশুর মাথার চুল কেটে দেয়। এরপর সারারাত গাছের সঙ্গে তাদেরকে বেঁধে রাখা হয়। সোমবার সকালে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে মুচলেকা নিয়ে বাবুল হাওলাদার ও তার ছেলেকে ছেড়ে দেন লতিফ খান।

ভুক্তভোগী বাবুল হাওলাদার জানান, ছেলের বিরুদ্ধে সুুপারি চুরির অভিযোগ তুলে সারারাত আমাদেরকে খোলা আকাশের নিচে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। রাতে শীতে অনেক কষ্ট পেয়েছি। সকালে একটি সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। 

নির্যাতনের শিকার শিশুর মা শিউলি বেগম বলেন, আমার ছেলে ও স্বামীকে রাতে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আমিও ঘটনাস্থলে যাই। তখন লতিফ খান আমাকে একটি চড় মরেন। আমার স্বামী ও ছেলেকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে মারধরের কারণে তাদের সারা শরীর কালো হয়ে ফুলে উঠেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। 

তিনি আরও বলেন, আমি অসহায়। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিবেশী বলেন, হাতেনাতে না ধরে এবং কোনোপ্রকার সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই এভাবে চুরির অভিযোগ তুলে বাড়ি থেকে ১১ বছরের শিশু ও তার বাবাকে তুলে নিয়ে বেঁধে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি। 

তবে লতিফ খান নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ছাব্বির সুপারি চুরি করায় তাকে বেঁধে রাখা হয়। তাকে মারধর করা হয়নি। চুরি করার পরেও ছাব্বিরের বাবা তার ছেলেকে শাসন না করায় তাকেও আনা হয়েছে।

এ ব্যাপারে নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান জানান, ঘটনাটি আমি এখনো জানি না।  অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর