২ মার্চ, ২০২৩ ১৭:১৪

খুলনায় চিকিৎসককে মারধর ও অপারেশন থিয়েটার ভাঙচুরের ঘটনায় গণপদত্যাগের হুঁশিয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনায় চিকিৎসককে মারধর ও অপারেশন থিয়েটার ভাঙচুরের ঘটনায় গণপদত্যাগের হুঁশিয়ারি

খুলনায় চিকিৎসককে মারধর ও অপারেশন থিয়েটার ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশের এএসআই নাঈমুজ্জামান শেখকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হলেও কর্মবিরতি প্রত্যাহার করছেন না চিকিৎসকরা। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দায়ের করা পুলিশ সদস্যের স্ত্রীর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলমান থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ খুলনা। একই সাথে প্রয়োজনে শনিবার বিএমএর সাধারণ সভায় গণপদত্যাগ করে চিকিৎসকরা আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা বিএমএ মিলনায়নে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন সংগঠনের খুলনা শাখার সভাপতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলম। 

তিনি বলেন, আমরা পুলিশকে প্রতিপক্ষ বানাইনি। আমরা কর্মস্থলে আমাদের নিরাপত্তা চেয়েছি। ডাঃ নিশাত আব্দুল্লাহর ব্যক্তিগত কোন আচরণের দায় বিএমএ নেবে না। কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে তাকে যখন লাঞ্ছিত করা হয়েছে এবং এর প্রতিবাদে আমরা যখন কর্মসূচি দিয়েছি তখনই যৌন হয়রানির কথা বলা হচ্ছে। কর্মবিরতি ঘোষণার পর অভিযোগকারী নারী ও তার স্বামী বিএমএ কার্যালয়ে এসে তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছে, তখনও তারা এ ধরনের কোন কথা বলেনি। 

কিন্তু ডাঃ নিশাত আব্দুল্লাহ তাকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় পুলিশের এএসআই নাঈমুজ্জামান শেখ ও তার স্ত্রীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করার পরই কাউন্টার হিসেবে যৌন হয়রানির অভিযোগে পাল্টা মামলা করা হয়েছে। চিকিৎসা চলাকালীন সময় তাকে যৌন হয়রানি করলে তিনি আগে বিচার চেয়ে মামলা করতে পারতেন কিংবা তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে আপত্তি জানাতে পারতেন। 

বিএমএ খুলনা সভাপতি ডাঃ বাহারুল আলম বলেন, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা দীর্ঘদিনের। কর্মক্ষেত্রে যখন মর্যাদাই থাকবে না তখন চাকরি থেকে গণপদত্যাগের সিদ্ধান্তও আসতে পারে। তিনি বলেন, অভিযুক্ত আসামি পুলিশের এএসআই নাঈমুজ্জামানকে গ্রেফতার ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত খুলনা জেলার সকল সরকারি-বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। 

জানা যায়, খুলনা আবু নাসের হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ নিশাত আব্দুল্লাহ ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে সোনাডাঙ্গা থানায় হামলা মারধর ভাঙচুরে অভিযোগে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এজাহারে তিনি বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরীর শেখপাড়ায় অবস্থিত হক নার্সিং হোমে অপারেশন চলাকালে তাকে শারীরিক লাঞ্ছিত ও অপারেশন থিয়েটার ভাঙচুর করা হয়। কিন্তু এ ঘটনার পরপরই ওই পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী নুসরত আরা ময়না সোনাডাঙ্গা থানায় ডাঃ নিশাত আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে শিশুকন্যাকে জিম্মি করে তাকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে পাল্টা মামলা করেন।

তিনি বলেন, হক নার্সিং হোমে শিশু কন্যাকে জিম্মি করে তাকে শ্লীলতাহানি ও চিকিৎসা অবহেলায় তার মেয়েকে অঙ্গহানি করা হয়েছে। তিনি অনৈতিক প্রস্তাবে আপত্তি জানালে ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে তার মেয়ের হাতের একটি আঙ্গুলের অর্ধেকাংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও চিকিৎসা দিতে রাজি হয়নি ওই চিকিৎসক। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে ওই চিকিৎসক হাতের আঙ্গুলে ড্রেসিং করতে বাধ্য হয়।  

অপরদিকে চিকিৎসকের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে বুধবার সকাল ৬টা থেকে টানা কর্মবিরতি শুরু করে চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ, খুলনা। এতে খুলনার সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যায়। টানা দুই দিনের কর্মবিরতিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা। উল্লেখ্য, চিকিৎসকদের আন্দোলনের মুখে ১ মার্চ রাত ১০টার দিকে নাঈমুজ্জামান শেখকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর