৮ মার্চ, ২০২৩ ২২:৫০

রশির সূত্র ধরে খুনি শনাক্ত

সিলেট ব্যুরো

 রশির সূত্র ধরে খুনি শনাক্ত

পুলিশের হাতে গ্রেফতার হত্যায় অভিযুক্ত এক আসামি

সুরমা নদীর তীর থেকে দুবাই ফেরত সাজ্জাদ আলীর বস্তাবন্দী হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সাজ্জাদ আলীর বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা দায়ের করেন। তিনি অভিযোগ করছিলেন, ‘খুনিরা পরিকল্পিতভাবে তার ভাইকে খুন করে নদীতে বস্তাবন্দী করে লাশ ফেলে গেছে।’

খুনিদের শনাক্ত করতে গলদঘর্ম অবস্থা হয় পুলিশের। তদন্তের একপর্যায়ে সাজ্জাদকে হাত-পা বাঁধা হয়েছিল যে রশি দিয়ে, তার কাটা অংশের খোঁজ মেলে। এর সূত্র ধরেই শনাক্ত হয় খুনি। খুনিরা দূরের কেউ নয়, সাজ্জাদেরই আপনজন। একজন মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলী ও অপরজন সিরাজ আলী। দু’জনই নিহত সাজ্জাদের সহোদর।

হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন নিয়ে বুধবার সিলেট মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায়।

নিহত সাজ্জাদ আলী সিলেট মহানগরীর জালালাবাদ থানার বসন্তেরগাঁও এলাকার মৃত ছোরাব আলীর ছেলে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে তারা হলো- নিহত সাজ্জাদের ভাই সিরাজ আলী (৪২) ও জাহাঙ্গীর আলী (২৭) এবং সাজ্জাদের বন্ধু লক্ষীপুর সদর থানার রাজাপুর গ্রামের মৃত ছিদ্দেক আলীর ছেলে শাহাজান (৩৯)। লাশ উদ্ধারের পরপরই শাহাজানকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। রিমাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

পুলিশ জানায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকার টেকনিক্যাল রোডে সুরমা নদীর তীর থেকে হাত-পা বাঁধা বস্তাবন্দী একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর লাশটি নিজের ভাইয়ের বলে শনাক্ত করেন জাহাঙ্গীর আলী। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনি ২২ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাতদের আসামি করে দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

তদন্তে নেমে শুরুতে হত্যাকাণ্ডের রহস্যের কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। তদন্তের একপর্যায়ে পুলিশ সাজ্জাদের বাসার ছাদে গিয়ে একটি রশির অংশ বিশেষ খুঁজে পায়। যার একটি অংশ বাসার ছাদের রডের সাথে, অপর অংশ পাশের একটি গাছের ডালে বাঁধা ছিল। কিন্তু মাঝের অংশ ছিল না। পুলিশ ওই কাটা রশি আলামত হিসেবে জব্দ করে।

কাটা ওই রশির সাথে লাশের হাত-পা যে রশি দিয়ে বাঁধা ছিল, সেটির মিল খুঁজে পায় পুলিশ। রশিকে ক্লু ধরে এগোতে থাকে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয় মামলার বাদী নিহত সাজ্জাদের ভাই জাহাঙ্গীরকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাহাঙ্গীর হত্যাকাণ্ডে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন। তার দেওয়া তথ্যমতে বসন্তেরগাঁওর একটি কবরস্থান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়। সাজ্জাদকে খুনের পর বস্তাবন্দী করে একটি সিএনজি অটোরিকশা করে সুরমার তীরে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয় বলে পুলিশকে জানান জাহাঙ্গীর। তবে পুলিশ অজ্ঞাতনামা ওই চালককে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার সোহেল রেজা জানান, পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে সহোদররা মিলে খুন করেছেন সাজ্জাদ আলীকে। পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগবাটোয়ারার জন্য সাজ্জাদ তাগিদ দেওয়ায় ভাইয়েরা মিলে তাকে খুন করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সোহেল রেজা জানান, হত্যাকাণ্ড ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে খুনের পর নাটক সাজিয়ে নিজেই মামলার বাদী হন জাহাঙ্গীর। আদালতে দেওয়া জবানবন্দীতে জাহাঙ্গীর হত্যাকাণ্ডের সাথে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন। 

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর