১৭ এপ্রিল, ২০২৩ ১৯:২৮

লালমনিরহাটে ভিজিএফের চাল ছিনতাইয়ের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাটে ভিজিএফের চাল ছিনতাইয়ের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

ছবি- বাংলাদেশ প্রতিদিন

ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে চেয়ারম্যানের সামনেই ৩৬ জন দুস্থ পরিবারের ১২ বস্তা (৩০ কেজি বস্তা) ভিজিএফের চাল ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রবিবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে। 

চাল ছিনতাইয়ের ঘটনায় সোমবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে  আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিআর সারোয়ার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। 

ইউএনও বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার সন্ধ্যায়। আমি জেনেছি রাতে। চেয়ারম্যান ও ভুক্তভোগীদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়ায় আসল ঘটনা উদঘাটনের জন্য অনুসন্ধান চলছে। সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি, ভুক্তভোগীদের সাথে কথাও বলেছি।
 
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এ বছরও দুস্থ অসহায় পরিবারের জন্য বিশেষ ভিজিএফ চাল বিতরণ করে সরকার। এজন্য সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরি করে জনপ্রতি ১০ কেজি হারে চাল বিতরণ করা হয়। সব মিলিয়ে তালিকা প্রণয়ন হলেও আদিতমারী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে শুধু ইউনিয়ন পরিষদ ও ভাইস চেয়ারম্যানের অংশের ভিজিএফ স্লিপধারী সুফল ভোগীদের মাঝে রবিবার দিনব্যাপী চাল বিতরণ করা হয়। বাকি উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপি ও দলীয় অংশের স্লিপের চাল সোমবার স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদে বিতরণ করা হয়।

রবিবার (১৬ এপ্রিল) মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের তালিকা ও ইউনিয়ন পরিষদের তালিকাভুক্ত সুফলভোগীদের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের তালিকাভুক্তদের পর ভাইস চেয়ারম্যানের ৩৬ জনের মধ্য থেকে গোবিন্দ রায় নামে একজনের সাক্ষর নিয়ে ১২টি বস্তা উত্তোলন দেখানো হয়। সাক্ষর করা মাত্রই চালের বস্তাগুলো টেনে ছিনিয়ে নেন স্থানীয় চাল বিক্রেতা আব্দুল আহাদ ও ইউপি চেয়ারম্যানের গাড়িচালক আলমগীর হোসেন। এসময় চেয়ারম্যান কোনো প্রতিকার করেননি বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। চাল না পেয়ে স্লিপ আর খালি বস্তা নিয়ে বঞ্চিত ৩৬ জন দুস্থ উপজেলা পরিষদে এসে ভাইস চেয়ারম্যানকে অবগত করে প্রতিকার দাবি করেন।

ভুক্তভোগী উপেন্দ্রনাথ ও কসুল্লা রানী বলেন, প্রথম দিকে ৩টা স্লিপ দিয়ে এক বস্তা চাল দিতে চেয়ারম্যান আমাদের ১২ জনকে ডাকেন। পরে চেয়ারম্যানের গাড়িচালক বলেন- ৩৬ জনকেই লাগবে। তবুও ৩৬ জনের মধ্য থেকে একজনের সাক্ষর নিয়ে ১২ বস্তা চাল গুদাম থেকে বের করা মাত্রই চেয়ারম্যানের ড্রাইভার আলমগীর আর আহাদ কেড়ে নিয়ে যায়। পরে চেয়ারম্যান বলেন- চাল দিয়েছি, তোমরা রাখতে পারনি। সেটা আমার দোষ না।

মহিষখোচা ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী  বলেন, তারা স্লিপ পাঠালেও লোক পাঠাতে পারেনি। তবুও ভাইস চেয়ারম্যানের প্রতিনিধির হাতে ১২ বস্তা বুঝিয়ে দিয়েছি। তাদের সামনে চালের বস্তাগুলো নিয়ে গেছে। ভেবেছি তারা বিক্রি করেছে হয়তো। বঞ্চিত হলেও তাদের দেওয়ার মতো চাল আমার কাছে আর নেই।
 
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন আক্তার বলেন, আমার সুপারিশের হলেও ইউনিয়ন পরিষদের তালিকাভুক্ত এবং রেজুলেশনভুক্ত সুফলভোগী, তাদের স্বাক্ষর নিয়ে চালের বস্তা গায়েব করা হয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ সবাইকে অবগত করা হচ্ছে। তদন্ত করে প্রতিকার দাবি করেন তিনি।

মহিষখোচা ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন বলেন, আমি যতক্ষণ ছিলাম সেসময় এমন ঘটনা ঘটেনি। অসুস্থ থাকায় বিতরণ শুরুর কিছুক্ষণ পরেই চলে এসেছি। পরে ছিনতাইেয়ের ঘটনাটি জেনে সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর