১২ মে, ২০২৩ ১৯:১৪

পেট্রল ঢেলে স্ত্রীর শরীরে আগুন, হাসপাতালে চারদিন লড়ে মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক

পেট্রল ঢেলে স্ত্রীর শরীরে আগুন, হাসপাতালে চারদিন লড়ে মৃত্যু

প্রতীকী ছবি

পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হলো স্বামীর দেওয়া আগুনে ঝলসে যাওয়া গৃহবধূ মোছা. নিলুফা ইয়াসমিন হ্যাপীকে (২৫)। চারদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই শেষে শুক্রবার ভোরে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। 

পাবনার ঈশ্বরদীতে পারিবারিক কলহের জেরে প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে শরীর ঝলসে দিয়েছিলেন স্বামী মো. রনি (৩০)। গত সোমবার দুপুরে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের আওতাপাড়া গরুর হাটের পাশে রানার চায়ের দোকানে এই রোমহর্ষক ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত মো. রনি সরদার (৩০) আওতাপাড়া বাজার এলাকার রমজান সরদারের ছেলে এবং মোছা. নিলুফা ইয়াসমিন হ্যাপি (২৫) নেত্রকোনা জেলার উলুকান্দার আব্দুল লতিফ আকন্দের মেয়ে এবং রনির দ্বিতীয় স্ত্রী ছিরেন। ঘটনাটি স্বীকার করেছেন ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার।

প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী ও থানা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩ বছর আগে ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের আওতাপাড়ার রমজানের ছেলে রনির সাথে নেত্রকোনার উলুকান্দার আব্দুল লতিফ আকন্দের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে নিলুফা ইয়াসমিনের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে হ্যাপী জানতে পারেন রনির আগে থেকেই স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর নিজের বাড়িতে দ্বিতীয় স্ত্রী হ্যাপীকে না তুলে তাকে নিয়ে রনি পাকশীর রূপপুরে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। রনির দেওয়া ওয়াদা মোতাবেক ভাড়াবাড়ি ছেড়ে হ্যাপী রনির নিজ বাড়িতে বসবাস করতে চাইলে বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই কলহ বিবাদ লেগেই থাকতো।

ঘটনার দিন দুপুর ১টার দিকে স্বামীর বসতবাড়িতে বসবাসের জন্য হ্যাপী স্বামী রনির অনুমতি ছাড়াই আওতাপাড়া গেলে উভয়ের মধ্যে চরম বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। তখন রনি হ্যাপিকে বেধড়ক মারপিট করেন। হ্যাপিকে টেনেহিঁচড়ে বাজারের মধ্যে একটি চায়ের দোকানে এসে বসেন। একপর্যায়ে রনি উত্তেজিত হয়ে স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য বন্ধু পলাশকে পেট্রল কিনে আনতে বলেন। রনির কথামতো পলাশ পাশের একটি দোকান থেকে পেট্রল এনে রনিকে দেন। এরপর রনি হ্যাপীর শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন। 

এ ঘটনার পর হ্যাপীকে প্রথমে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে, তারপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং সর্বশেষ ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। 
 
মুঠোফোনে হ্যাপির ভাই ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বোনের শরীরের ৭০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। আমরা অনেক চেষ্টা করেও আমার বোনকে বাঁচাতে পারিনি। আমি এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’  

ঈশ্বরদী থানার ওসি অরবিন্দ সরকার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার এজহারভুক্ত আসামি স্বামী রনিকে গত ১০ মে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ মামলার অপর এজহারভুক্ত আসামিকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর