১৭ মে, ২০২৩ ১৬:১২

রংপুরে এবারও ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর


রংপুরে এবারও ধান-চাল সংগ্রহ
অভিযান ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা

রংপুর বিভাগে আমন মৌসুমের মত এবার বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমনে বিভাগের ৮ জেলার মধ্যে ৭ জেলাতেই ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের হার শূন্যের কোঠায় ছিল। এছাড়া চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরুণ হয়নি কোন জেলাতেই। ধান-চাল সরকারি মূল্যে গোডাউনে বিক্রি করলে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের উৎপাদন খরচ উঠছে না। সরকারের নির্ধারিত দামের তুলনায় বাজারে দাম বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও সরকারি মূল্যে চাল সরবরাহ করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাই এবারও রংপুর বিভাগে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হবে বলে মনে করছেন রংপুরের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। 

জানা গেছে, আমনের পর এ বছর বোরো মৌসুমেও বাম্পার ফলন হয়েছে। এবারের বোরো মৌসুমে আমনের চেয়ে দাম কেজি প্রতি ২ টাকা বাড়িয়ে ৩০ টাকা এবং চালের দাম বাড়িয়ে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে সরকারিভাবে ধানের নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় কৃষক খাদ্যগুদামে চাল বিক্রি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এছাড়া লাভ না হওয়ায় চালকল মালিকরাও নির্ধারিত দামে সরকারের কাছে চাল বিক্রি করতে চান না। ফলে এ মৌসুমেও ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রংপুর বিভাগে এবার ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৭ হাজার মেট্রিক টন এবং চলের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। গত আমন মৌসুমে রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায় এক ছটাক আমন ধান ক্রয় করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। শুধু দিনাজপুর জেলায় মাত্র ৩ মেট্রিক টনের কিছু ওপরে। এছাড়া চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিভাগের ৮ জেলায় কোন জেলাই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। 

কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে খরচ পড়ছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। একবিঘা জমির ধান সরকারি মূল্য ১০ হাজার টাকার কিছু ওপরে। সরকারি মূলে ধান বিক্রি করলে কৃষকদের বিঘা প্রতি লোকসান হবে দেড় হাজার টাকার ওপরে। অপরদিকে চাল ব্যবসীয়দের  প্রতি কেজিতে আর্থিক ক্ষতি হবে ৩ থেকে ৫ টাকা। 

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কল্যানি ইউনিয়নের চাষি বুলবুল ইসলাম বলেন, এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ধান উৎপাদন করতে খরচ হয় ১২ হাজার টাকার ওপর। এর মধ্যে জমির আইল কাটা বাবদ ৫০০ টাকা, জমিচাষে ১৫শ টাকা, রোপন বাবদ ২ হাজার ১০০ টাকা, নিড়ানি বাবদ দেড় হাজার টাকা, সার ৭/৮ শ টাকা, কীটনাশক স্প্রে ১২/১৩শ টাকা, ধান কাটা-মাড়াই ৪ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে একবিঘা জমিতে খরচ হয় কৃষকের ১২ হাজার টাকার ওপর। এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন হয় ৮/ ৯ মনের মত। সরকার এবার ধান ক্রয় করবে ৩০ টাকা কেজি হিসেবে। সরকারি মূল্য অনুয়ায়ি একবিঘা জমির ধানের মূল্য হয় ১০ হাজার  টাকার কিছু বেশি মত। সরকারি মূল্যে গোডাউনে ধান দিয়ে কৃষকদের লাভ তো দূরের কথা উৎপাদনের ব্যয়ও উঠছে না। বিঘায় প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টাকা কম পাবে কৃষকরা উৎপাদন খরচের চেয়ে। তাই এবার সরকারি গোডাউনে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে শঙ্কা করা হচ্ছে। 

অপরদিকে চাল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকার চালের মূল্য ধরেছেন ৪৪ টাকা কেজি। অথচ এক কেজি চাল উৎপাদনে মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের খরচ পরে ৪৬/৪৭ টাকা। এছাড়া বর্তমানে বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। বাজারদরের চেয়ে ৫/৭ টাকা কম সরকারি মূল্য হওয়ায় কোন ব্যবসায়ী চাল দিতে আগ্রহী হচ্ছে না। গত আমন ও বোরো মৌসুমে কৃষক ও মিলাররা ধান সরবরাহে আগ্রহ না দেখায় ধানচাল সংগ্রহ অভিযান অনেকাটাই ব্যর্থ হয়েছে রংপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোতে। 
রংপুরের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোঃ আসরাফুল আলম বলেন, ১৮ মে পর্যন্ত মিলার দের সাথে চুক্তি হবে।  তিনি আশা প্রকাশ করেন এবার ধান-চাল সংগ্রহ সফল হবে। 

বিডি প্রতিদিন/এএ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর