২৮ আগস্ট, ২০২৩ ১২:০৫

নওগাঁয় দুই মামলায় দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁয় দুই মামলায় দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

নওগাঁর পোরশার ইলাম গ্রামের এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে পলাতক আসামির যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মেহেদী হাসান তালুকদার। 

 মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আসামির অনুপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন। 

রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি মকবুল হোসেন জানান, ২০১৪ সালের ১০ জানুয়ারি উক্ত এলাকার মাদ্রাসা ছাত্রী আসমা খাতুন (ছদ্মনাম) নানীর বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে কাশিতাড়া এলাকার হারুন শাহের আম বাগানে নিয়ে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। রক্তাক্ত ও মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন উক্ত ছাত্রীর নানাকে খবর দিলে তিনি এসে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করান।

পোরশা থানায় ছাত্রীর নানা অভিযোগ দায়ের করলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে পোরশা থানার গোবরাকুড়ি এলাকার ওসমানের ছেলে হ্যাপির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালতে চলতি মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত এগারজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় যুক্তিতর্ক শ্রবণের জন্য ধার্য করে। আসামি পলাতক থাকায় নিয়ম অনুযায়ী তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী এস.এম সারোয়ার হোসেন। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে জনাকীর্ণ আদালতে পলাতক আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার রায় ঘোষণা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মেহেদী হাসান তালুকদার। রায় ঘোষণার সময় আসামি পলাতক থাকায় সাজা পরোয়ানাসহ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালতের বিচারক। জরিমানার টাকা ধর্ষণের শিকার নারীকে দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

অপরদিকে নওগাঁর পত্নীতলার কাশিপুর এলাকার এক প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে একই গ্রামের কাজল মালীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত করার আদেশ প্রদান করেন নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও নমরো জজ মেহেদী হাসান তালুকদার। 

রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত বিশেষ কৌশলী মকবুল হোসেন জানান, পত্নীতলা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী নারী ২০২০ সালের ২৭ মার্চ বেলা আড়াইটার সময় তার বাড়ির পেছনে শুকনো পাতা ঝাড়ু দিতে গেলে একই গ্রামের উক্ত আসামি পেছন দিক থেকে জাপটে ধরে মুখে গামছা পুরে দেয়। এরপর তার শয়ন ঘরে নিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এই অভিযোগে প্রতিবন্ধী নারীর স্বামী ২০২০ সালের ১ এপ্রিল পত্নীতলা থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।

আদালতে আসামি ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। তদন্ত শেষে আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০২২ সালে ৮ জুন মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়ে চলতি বছরের ৩ আগস্ট ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য সমাপ্ত করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শ্রবণ করা হয়। এরপর রায় ঘোষণার জন্য ধার্য হলে আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মেহেদী হাসান তালুকদার প্রকাশ্যে আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার আদেশ প্রদান করেন। আসামি পূর্ব থেকেই কারাগারে থাকায় তাকে সাজা পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়। আসামি পক্ষের অ্যাডভোকেট সোমেন্দ্রনাথ কুন্ডু মামলা পরিচালনা করেন। জরিমানার অর্থ ধর্ষণের শিকার নারীকে প্রদানের নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক।

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর