ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় পাবনায় হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। শনিবার সকালে হাটে গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এর কারণ হিসেবে চাষিরা জানান, গত তিন দিনের বৃষ্টি। বৃষ্টির জন্য ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলতে পারেনি চাষিরা। হাটে পেঁয়াজ কম থাকায় চাষি ও বাধাইকারকরা দাম বাড়িয়ে দেন। সকাল ৯টার দিকে পুরোনো পেঁয়াজ (হালি পেঁয়াজ) বিক্রি হয় সাত হাজার টাকায় মন দরে। নতুন মূলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজ বিক্রি হয় মণ পাঁচ-ছয় হাজার টাকায়।
এদিকে, রপ্তানি বন্ধের খবরে শনিবার মুহুর্তেই ১০০ টাকা থেকে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। দুপুরে সদর উপজেলার সিঙ্গাবাজার ও শহরের বড় বাজারে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান রনি জরিমানা করেন।
মাহমুদ হাসান রনি জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর হঠাৎ করেই বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। পরে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুপুরে সিঙ্গাবাজার ও শহরের বড় বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে দেখা যায়, ১০৫ টাকায় কিনে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছিলেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রির দায়ে ৬ জনকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মজুদ করা পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাতেগোনা কিছু চাষি ও বাধাইকারকদের ঘরে এখনও ভালো পরিমাণ পুরোনো পেঁয়াজ মজুত আছে। এরই মধ্যে কিছু মুড়ি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। বেশি দামের আশায় বাধাইকারকরা অল্প অল্প করে পেঁয়াজ হাটে নেন। তবে মুড়ি বা মূলকাটা পেঁয়াজ পুরোদমে বাজারে উঠলে পুরোনো পেঁয়াজের দাম কমবে।
বনগ্রাম হাটের কয়েকজন ব্যাপারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাটে আমদানি কম থাকায় পেঁয়াজের দাম বেশি। তারা ইচ্ছা করে দাম বাড়াতে পারেন না। এটা চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। তবে তারা আশা করছেন মূলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজের মৌসুম পুরোদমে শুরু হলে দাম কমবে।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পাবনা জেলায় এ বছর ৮ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে কন্দ বা মূলকাটা পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৮ মেট্রিক টন। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ৫ হেক্টর। গত বছর চাষিরা পেঁয়াজ চাষে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তারা সরিষা চাষে বেশি ঝুঁকে পড়েছিলেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাবনার উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন জানান, এবার বর্ষা মৌসুম দীর্ঘায়িত হওয়ায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণে দেরি হয়েছে। ফলে তা বাজারে আসতেও কিছুটা দেরি হচ্ছে। আগামি ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পুরোদমে পেঁয়াজ সরবরাহ শুরু হলে দাম কমে আসবে।
তিনি আরো জনান, আবহাওয়া ভালো। মাঠকর্মীরা চাষিদের সব সময় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। তিনি জানান, পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনও বাড়ছে। চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে তারা আশাবাদী।
বিডি প্রতিদিন/এএম