‘সকালে উঠে আর কোনো দিন নাস্তার টাকা দিয়ে যাবে না আমার বাবা। যাবার সময় ছোট ভাইকে ঘুমের মধ্যে আদর করবে না বাবা।’ এমন করেই বিলাপ করে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনায় মৃত লেগুনা যাত্রী জয়নাল আবেদীনের ১৫ বছর বয়সী মেয়ে তাসমিন আক্তার। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া তাসমিনকে নানীসহ আত্মীয়স্বজনরা স্বান্তনা দিলেও তার বিলাপ থামাতে পারছে না কেউ।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব বৃন্দাবনখীল এলাকায় জয়নাল আবেদীনের বাড়িতে গেলে এ দৃশ্য দেখা যায়। এদিকে তার ছোট ছেলে ওমর ফারুক (৮) বাবার সাথে তোলা ছবির দিকে তাকিয়ে বলে, আমার বাবা কই? আমার বাবা কই?
জয়নাল আবেদীনের শ্বশুর মোহাম্মদ হোছেন বলেন, জয়নাল আবেদীনের কোন বাড়িভিটা নেই। আমার বাড়ির সাথে পলিথিন দিয়ে একটি বারান্দা তৈরি করে সেখানে বসবাস করতেন।
এরপরও জীবনের তাগিদে ঢালাই শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। সবাই স্কুলে লেখাপড়া করে। পরিবারে আয়ের কোন উৎসও নেই তার।
নিহত জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী আয়েশা বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে ছেলে মেয়েদের নাস্তার জন্য ২০ টাকা দেয়। ছোট ছেলেকে ঘুমের মধ্যে আদর করে ঘর থেকে বের হয়। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার দরবেশহাট এলাকায় একটি বিল্ডিংয়ের ছাদ ঢালাইয়ের কাজে যোগ দিতে লেগুনায় উঠে জয়নালসহ ১২জন।
তিনি আরো বলেন, ঢালাই শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চালাত। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঘরে চাল নেই, বাজার নেই, নেই তেল ডালও। তখন থেকে চুলায় আগুন ধরেনি। এখন চার সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। কি করবো কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছি না।
এদিকে দুর্ঘটনায় নিহত চারজনের বাড়ি হারবাং ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। একই এলাকার চার জনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনায় নিহত চার পরিবারকে সাধ্যমত সহায়তা দেয়া হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের কলাবাগান এলাকায় পর্যটকবাহী বাস ও ঢালাই শ্রমিক বোঝাই লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে মারা যায় চার শ্রমিক। এ ঘটনায় আহত হয় ৬ জন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল