বগুড়ায় বিশ্ব ভালোবাসা, পয়লা ফাল্গুন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জমজমাট হয়ে উঠেছে বগুড়ার ফুল বাজার। এই তিনটি দিবসকে ঘিরে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ইতিমধ্যে বগুড়ার ফুল ব্যবসায়ীরা বগুড়া, যশোর, ঢাকা ও টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন ফুলের মোকাম থেকে ফুল সংগ্রহ শুরু করেছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশেষ তিনটি দিবস উপলক্ষে প্রতিটি ফুলের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
বগুড়ার ফুল মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, বিশেষ তিনটি দিবসকে ঘিরে বগুড়ায় এখন জমজমাট ফুল বাজার। আগে থেকেই ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে ফুল দোকানে ভিড় করছেন তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী মানুষরা।বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বগুড়ার ফুল মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এ মাসে প্রায় কোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে সারা বছর বগুড়ার বাজারে প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়ে থাকে। এর মধ্যে খুচরা দোকানে প্রায় ২ কোটি টাকা আর পাইকারি বাজারে ১ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়।
দিন যতই যাচ্ছে, বগুড়ায় ফুলের চাহিদা বেড়েই চলছে। বিভিন্ন দিবসে, বিয়ের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ফুলের চাহিদা রয়েছে। তবে ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মে মাস পর্যন্ত ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। বিক্রিও বেড়ে যায়। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো আর ফুল নষ্ট হয় না। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পয়লা ফাল্গুন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বগুড়ায় ফুলের চাহিদা আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে।
আর মাত্র ১ দিন পর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এই দিবসকে রাঙাতে নানা আয়োজনে মেতে উঠেছে বগুড়ার তরুণ-তরুণীরা।
ফুল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের বড় মাধ্যম। তাই যুগে যুগে নানা প্রজাতির ফুল মানুষের কাছে অতি প্রিয়। সেই প্রিয় ফুল এখন দ্বিগুণহারে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভালোবাসা দিবসে ফুল দেওয়া-নেওয়ার মধ্য দিয়ে চলবে ভালোবাসার আদান-প্রদান। লাল-হলুদ-বেগুনি গোলাপ, ডালিয়া, ডায়ানথাস, চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গাঁদাসহ নানা ফুল শোভা পাবে মানুষের হাতে, কিশোরী-তরুণীদের খোঁপায় কিংবা মাথায়।
খ্রিস্টীয় ৪৯৬ সাল থেকে এ দিবসটি সারা বিশ্বে পালিত হলেও বাংলাদেশে ১৯৮০ সালের পর থেকে এ দিবসটি জনপ্রিয় হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি এ দিনটিকে বিশ্বব্যাপী ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু-বান্ধব, স্বামী-স্ত্রী, মা-সন্তান, ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ মানুষরা এই দিনে একে অন্যকে তাদের ভালোবাসা জানায়।
এই দিনে পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো ভালোবাসার মানুষে পরিপূর্ণ থাকে। ভালোবাসা দিবসের এই দিনে প্রিয়জনকে সবাই ফুল ও বিভিন্ন সামগ্রী উপহার দিয়ে থাকে।
সোমবার বিকেলে বগুড়ার ফুল মার্কেটে দেখা যায় নানা বয়সী মানুষের ভিড়। কেউ ফুল কিনতে এসেছেন, কেউ ফুলের দাম জানতে এসেছেন, আবার কেউ ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জনকে কেমন ফুল উপহার দেবেন আগে থেকেই পছন্দ করতে এসেছেন।
বগুড়া শহীদ খোকন পার্ক এলাকার ফুল ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক জানান, বর্তমানে বগুড়ায় প্রায় সব ধরনেরই ফুল চাষ হচ্ছে। যেমন-গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিয়া, জার্বেরা, গাদা ফুল, জিপসি, কামিনি পাতা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্যালোডিলাক্স, কম্পোন, রড স্টিক। এসব ফুল চাষে লাভবান হচ্ছেন ফুল চাষিরা। বর্তমানে বগুড়ার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলাতেও তারা এসব ফুল বিক্রি করছেন। বগুড়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও বিক্রি বেড়ে গেলে ব্যবসায়ীরা যশোর, কালিগঞ্জ থেকেও ফুল নিয়ে আসেন বগুড়ায়। বগুড়ার এই মার্কেটে মোট ১৭টি দোকান রয়েছে। আগের চেয়ে এখন ফুলের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। তবে বিশ্ব ভালোবাসা, পয়লা ফাল্গুন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ফুলের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি ফুল ১০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে গেছে। বিভিন্ন রঙের প্রতিটি থাই গোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। দেশি লাল গোলাপ ৩০ টাকা। যা আগে বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। রজনীগন্ধা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা প্রতি স্টিক, ওয়ান পিচ ৫০ টাকা, জার্বেরা ৩০ টাকা, গাজরা ১০০ টাকা, গাঁধা ফুল প্রতি হাজারে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও পয়লা ফাল্গুন উপলক্ষে পলাশ বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা পিচ।
বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে এগিয়ে আছে সদর উপজেলা। এ ছাড়াও জেলার শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর ও সোনাতলা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করা হচ্ছে। এ উপজেলাগুলোতে ফুল চাষ করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন শতাধিক যুবক।
ফুল কিনতে আসা মহুয়া আকতার জানান, আমি আমার স্বামী এবং সন্তানদের বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ফুল মার্কেটে ফুলের দাম জানতে এসেছি। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ফুলের দাম অনেক বেশি।
বগুড়া ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোজাফ্ফর রহমান জুয়েল জানান, হঠাৎ করেই পাইকারি বাজারে ফুলের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। চাহিদা থাকলেও আমদানি কম। আমদানি কম হলে বেচাকেনা ভালো হবে না। গত বছরের তুলনায় এ বছর বেচাকেনা কম হবে বলে মনে হচ্ছে। বগুড়ায় তিনটি দিবস মিলে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হতে পারে বলে তিনি জানান।
বিডি প্রতিদিন/এমআই