১৮ মার্চ, ২০২৪ ২১:১৪

বিএমডিএ প্রকৌশলীর ভুয়া ডিগ্রি, তদন্তের নির্দেশ মন্ত্রণালয়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বিএমডিএ প্রকৌশলীর ভুয়া ডিগ্রি, তদন্তের নির্দেশ মন্ত্রণালয়ের

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) প্রকৌশলী পিএইচডি না করেও নামের আগে ব্যবহার করছেন ডক্টরেট ডিগ্রি। তার দাফতরিক স্বাক্ষরের সব জায়গায় নামের আগে ‘ড.’ লিখছেন। বিএমডিএ’র ওয়েবসাইটেও নামের আগে ‌‘ড.’ লেখা আছে। অভিযুক্ত কর্মকর্তার নাম মো. আবুল কাসেম। তিনি বিএমডিএ’র প্রধান কার্যালয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছিলেন।

ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহারের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাটি তদন্তে নির্দেশনা দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর আগেও ২০২০ সালে আবুল কাশেমের পিএইচডি নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তদন্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। সেই তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। আবারও একই ঘটনার তদন্তে ১০-১২ দিন আগে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, চার বছর আগে অন্য একজন নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। তার সময়ে এমন চিঠি মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে কি না, সেটি তিনি জানেন না। তবে ১০-১৫ দিন আগে মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি তিনি পেয়েছেন। আবুল কাসেম কোথায় পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন, পিএইচডির জন্য পড়াশোনা করলে এর জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েছিলেন কি না, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে নামের আগে ‘ড.’ শব্দ ব্যবহার করছেন কি না-তা চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হবে। আবুল কাশেমের উত্তর পাওয়ার পর তিনি লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে জানাবেন।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, আবুল কাসেমের বিরুদ্ধে ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি ব্যবহারের অভিযোগ পুরনো। এ নিয়ে ২০২০ সালে নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন কৃষি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৫ জুন কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপকরণ-১ অধিশাখার তৎকালীন উপ-সচিব মো. আসাদুজ্জামান এক চিঠিতে বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালককে বিষয়টি যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। আবুল কাসেম পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে থাকলে তিনি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েছেন কি না এবং অনুমোদন নিয়ে থাকলে তার সনদ ও গবেষণাপত্র (থিসিস) দাখিল করতে বলা হয়। এ ছাড়া নামের আগে ‘ড.’ শব্দের ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিনি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েছেন কি না, সেটিও জানাতে বলা হয়।

এই চিঠি আসার পরে বিষয়টি ধামাচাপা দেন তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক। এরপর পরের বছরই আবুল কাসেমকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থেকে পরিকল্পনা শাখার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে চলতি দায়িত্বে পদায়ন করা হয়। চার বছর পর অভিযোগের ব্যাপারে আবারও সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ওই একই চিঠি পাঠানো হয়েছে বর্তমান নির্বাহী পরিচালকের কাছে। চিঠি আসার পর দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও এখনো এ বিষয়ে যাচাই কার্যক্রম শুরু করেননি নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আবুল কাসেম প্রকৌশলী হিসেবে বিএমডিএতে যোগদান করেন ১৯৯৪ সালে। এরপর ২০১০ সালের দিকে নামের আগে ড. লেখা শুরু করেন।

পিএইচডি ডিগ্রির বিষয়ে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কাসেম বলেন, ‘পিএইচডি ডিগ্রি ব্যবহারের ফলে আমি কোনো সুবিধা পাই না। এটা আমাকে করতেই হবে তারও কোনো মানে নেই। আমি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক করেছি। তারপর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স করেছি রুয়েট থেকে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছি। তারপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিসটেন্ট লার্নিং নিয়ে পিএইচডি করেছি। ২০০৫ সালে ভর্তি হয়ে ২০০৯ সালে শেষ করেছি। আমার পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েই কথা কেন, অন্যগুলো নিয়ে কথা বলে না কেন? আমার তো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের ডিগ্রিটা দিয়েই উচ্চপদে চাকরি করতে পারব। অন্য ডিগ্রিগুলোর তো আমার প্রয়োজন নেই।’

তিনি দাবি করেন, তার পিএইচডি ডিগ্রি ভুয়া নয়। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েই তিনি পিএইচডি করেছেন। তবে এর জন্য কোনো ছুটি নেননি। এখন এসব নিয়ে তদন্ত হচ্ছে, তা তিনি জানেন না। চার বছর আগে এ ব্যাপারে কোনো চিঠি এসেছিল কি না সেটিও তিনি জানেন না।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর