রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার নারীরা টুপি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঈদ ঘিরে টুপি শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক, মালিক, পাইকার সবারই ব্যস্ততা বেড়েছে।
উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের সাব্দী গ্রামে গেলে এখন দেখা পাওয়া যাবে বাড়ির অঙিনায় বসে নারীরা টুপি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুধু সাব্দী গ্রাম নয় আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের তৈরি টুপি দেশের চাহিদা মিটিয়ে ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে। কাউনিয়ার পাশ্ববর্তী পীরগাছা উপজেলারও বিভিন্ন গ্রামেও তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের টুপি। সংসারের যাবতীয় কাজ শেষ করার পরে টুপিতে নকশা করেন নারীরা। এতে তাদের বাড়তি আয় হচ্ছে। তা দিয়ে অনেকেই সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন। তিস্তা নদীবেষ্টিত কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার কমপক্ষে ৪৫ গ্রামের এক লাখের বেশি নারী এখন টুপিশিল্পের সাথে জড়িত। তাই এখন সবাই বলাবলি করছেন টুপিতে কাউনিয়ার নারীরা বাজিমাত করেছেন। এখানকার প্রস্তুত একটি টুপি ওমানের বাজারে বাংলাদেশি টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রকার ভেদে ৫ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর দেশে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।
কাউনিয়ার শহীদবাগ ইউনিয়নের সাব্দী গ্রামে দেখা গেছে, সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে টুপি বানাচ্ছেন নারীরা। কেউ কেই রান্নার পাশাপাশি করছেন টুপি তৈরি। এই টুপি তৈরি করে একসময়ের অভাব-অনটনে থাকা দরিদ্র নারীদের জীবনমান পাল্টে গেছে। তারা এখন অনেকেই স্বাবলম্বী। তাদের সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। অভাব শব্দটি তাদের কাছে এখন অনেক দূর।কাউনিয়ার মায়ের দোয়া ট্রেডিং-এর পরিচালক আব্দুর রাজ্জাাক বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে ৬ থেকে ৭ হাজার নারী কাজ করেন। এসব নারী সংসারের কাজের পাশাপশি টুপি তৈরি করে বাড়তি আয় করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনছেন। তিনি বলেন, ‘এবার রমজান মাসে তার প্রতিষ্ঠান থেকে উন্নতমানের ২ হাজার টুপি ওমানে পাঠানো হয়েছে। কাউনিয়ায় ২৫টির মত প্রতিষ্ঠান টুপি তৈরির সাথে জড়িত। তাদের উৎপাদিত টুপি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বাজার ওমান এবং কাতারে সবচেয়ে বেশি টুপি রপ্তানি হয়। এছাড়াও কুয়েত, কাতার, সৌদি ও বাহরাইনসহ প্রায় ২০টি দেশে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করেছে।’
স্থানীয়রা জানান, ২০০৩ সালের দিকে হাফেজ আউয়াল নামে এক ব্যক্তি কাউনিয়া টুপি প্রস্তুত করে ব্যবসা শুরু করেন। এর পরে ভোলা থেকে আসা জহির উদ্দিন সাব্দি গ্রামে টুপির ব্যবসা শুরু করেন। শুরুর দিকে কয়েকজন নারী জড়িত থাকলেও ক্রমাগত তা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এক সময় মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো শুরু হয়। মধ্যপ্রাচ্যে এই টুপির চাহিদা বেশি থাকায় পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি উদ্যোক্তাদের। এরপরে ভুতছাড়া, বল্বভবিষু, শিবু, রামচন্ডীপুর, শাহবাজ, বেটুবাড়ি, পূর্বচাঁদঘাট, পশ্চিমচাঁদঘাট, বখসিপাড়াসহ এখন গোটা কাউনিয়া উপজেলা পরিণত হয়েছে টুপির কারখানায়।
কাউনিয়ার সাব্দী গ্রামের টুপির কারিগর সানজিদা বেগম, মনি বেগমসহ বেশ কয়েকজন জানান, একটি টুপির নকশা বুননসহ অন্য কাজ মিলে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। মাসে গড়ে তারা একেকজন ৪-৫টি করে টুপি তৈরি করেন। প্রতিটি টুপিতে নির্দিষ্ট নকশা ও সাইজ অনুযায়ী ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল