৬ এপ্রিল, ২০২৪ ২০:২১

ইলিশা ফেরিঘাটে মিলছে না সিরিয়াল, বিপাকে তরমুজ ব্যবসায়ীরা

জুন্নু রায়হান, ভোলা

ইলিশা ফেরিঘাটে মিলছে না সিরিয়াল, বিপাকে তরমুজ ব্যবসায়ীরা

ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটে সিরিয়াল পেতে তিন থেকে চার দিন সময় লাগার কারণে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ছেন তরমুজ ব্যবসায়ীরা। অপর দিকে পরিবহন সমস্যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে চাষিদের ওপর। তাই ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তরমুজ চাষিরা। ইলিশা-মজু চৌধুরীরহাট নৌরুটে বর্তমানে ছয়টি ফেরি চলাচল করলেও তিন কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ লাইন পড়েছে পণ্যবাহী যানবাহনের। এসবের অধিকাংশই তরমুজের গাড়ি। আর এজন্য নদীর নাব্য সংকটকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ভোলা জেলায় এবছর তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা জানান বাজারজাত করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন তারা। কারণ দ্বীপ জেলা থেকে বের হতে নির্ভর করতে হচ্ছে  ফেরির ওপর। আর নদীতে পানি কম থাকায় বেশিরভাগ সময়ই ফেরিগুলো চলছে কচ্ছপ গতিতে। ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগার কথা দুই ঘণ্টা। সেখানে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। আবার মাঝে মধ্যে চরে আটকে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় জোয়ারের জন্য। 

তরমুজের মৌসুমে এমনিতেই দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ টি অতিরিক্ত যানবাহন এসে জড়ো হয়। ফলে ইলিশা ফেরিঘাটে প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে দীর্ঘ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শতশত ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহন। গাড়ির মধ্যে থাকায় অতিরিক্ত গরমে অনেক তরমুজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে একদিকে নষ্ট হচ্ছে তরমুজ অপরদিকে তিন চার দিন আটকে থাকায় পরিবহন শ্রমিকদের থাকা খাওয়াসহ পরিবহন খরচ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তা ছাড়া ইলিশা ফেরিঘাট এলাকায় আবাসনের ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন  বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী, ড্রাইভার, হেলপাররা। 

ভোলার চরফ্যাশনসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে তরমুজ কিনে গাড়িতে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির উদ্দেশ্য নিয়ে রওনা হন ব্যবসায়ীরা। জেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায়  সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে গাড়িগুলো চলে আসে ইলিশা ঘাটে। এখানে এসেই পড়ে বিপাকে। কারণ এই ঘাটে ফেরির সিরিয়াল পেতে প্রতিটি পণ্যবাহী যানকে অপেক্ষা করতে হয় তিন থেকে চার দিন। কোন কোন সময় আরও বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়।

বর্তমানে ইলিশা-টু-মজু চৌধুরীরহাট রুটে ছয়টি ফেরি চলাচল করছে। কিন্তু তাতে করেও সময়মত তরমুজ বোঝাই গাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য বোঝাই যানবাহন আটকে থাকে ইলিশা ঘাটে। ড্রাইভাররা  জানান, এতে কারে কাঁচামাল অর্থাৎ তরমুজের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। গাড়ির মধ্যেই তরমুজ পচে গিয়ে গাড়ির নিচ দিয়ে পানি পড়তে দেখা যাচ্ছে।

অন্য দিকে গাড়িতে থাকা ড্রাইভার,  হেলপার ও ব্যবসায়ীদের দিন পার করতে হচ্ছে গাড়ির মধ্যে অথবা গাড়ির  নিচে। তাদের খাওয়া দাওয়া, ঘুম ও প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার নূন্যতম ব্যবস্থাও নেই এখানে। এসব নিয়েও তাদের অমানবিক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 

ভোলার ইলিশা থেকে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর ঘাটের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। পানি কম থাকা এবং ডুবো চরের কারণে অনেক ঘুরে যেতে হয়। তা ছাড়া এই রুটে অন্য সময় ৪ টি ফেরি চলাচল করে। এখন ঈদ এবং তরমুজের মৌসুম হওয়ায় আরও দুইটি ফেরি অতিরিক্ত যুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির ভোলার মেরিন কর্মকর্তা মো: আল আমিন। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলেও আশা করছেন এই কর্মকর্তা। 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর