১৩ এপ্রিল, ২০২৪ ১৭:৫৩

নুরুজ্জামান নুরুর সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার নেপথ্যে...

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

নুরুজ্জামান নুরুর সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার নেপথ্যে...

নুরুজ্জামান নুরু

বগুড়ার শাজাহানপুরে জামায়াতের কর্মী থেকে সরকারি দলের শীর্ষ সন্ত্রাসী বনে গেছেন নুরুজ্জামান নুরু। নানা অপকর্মে জামায়াত থেকে প্রভাবশালী সরকারি দলের নেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। এলাকার যেকোনো অপকর্মে তার হাত রয়েছে। শাজাহানপুর উপজেলায় জমি দখল, ইটভাটায় মাটি সরবরাহ, ইট ও বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, হাটবাজারের ইজারার টেন্ডারবাজি, বিভিন্ন কারখানায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, দাদন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে এই নেতার বিরুদ্ধে। একসময় মাঝিড়া এলাকায় চা দোকানের কর্মচারী থেকে জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা বনে যান নুরু।

জানা যায়, বগুড়ার মাঝিড়া ও আশপাশের কিছু যুবককে দিয়ে বিশাল ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেন নুরুজ্জামান। তারা চাঁদাবাজি, জমি ও বাড়ি দখল, কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। নুরুজ্জামানকে অনেকেই পা কাটা নুরু বলেই জানেন।

১৯৯০-এর দশকে তিনি স্থানীয় এক সন্ত্রাসীর সহচর ছিলেন। এক-এগারোর পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রভাবশালী নেতা বনে যান তিনি। পরে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। বিগত ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে তিনি মাঝিড়া ইউপির চেয়ারম্যান হন। শাজাহানপুরের মাঝিড়াপাড়ার দিনমজুর নূর আলমের প্রথম পক্ষের ছেলে নুরুজ্জামান নুরু।

২০১৫ সালে শাজাহানপুরের বুড়িতলা এলাকায় যুবলীগ নেতা সাজেদুর রহমানকে (সাজু মিয়া) পা কেটে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তখন মাঝিড়া বন্দর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ছিলেন নুরুজ্জামান। গত বছরের মার্চে শাজাহানপুর ইউএনও কার্যালয় থেকে হাটের ইজারার ২২ লাখ টাকার পে-অর্ডারসহ দরপত্র ছিনতাইয়ের নেপথ্যেও নুরুজ্জামানের নাম উঠে আসে। তখন ইউএনও কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর মোজাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে মাঝিড়া ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এলাকার নানা অপকর্মের নিয়ন্ত্রণ এখন সেই নুরুর হাতে। শাজাহানপুর উপজেলা সদরের মাঝিড়া থেকে শুরু করে বনানী, ফুলতলা, নয়মাইল, আড়িয়াবাজার, সাবরুলসহ উপজেলাজুড়ে তারা দাপিয়ে বেড়ান।

নুরুজ্জামান এক দশকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একাধিক নেতা বলেন, নুরুজ্জামানের বাবা নুরুল আলম পাহারাদার ছিলেন। থাকতেন মাটির ঘরে। কিন্তু নুরুজ্জামান থাকেন মাঝিড়া বন্দরে চারতলা বাসায়। চড়েন পৌনে এক কোটি টাকা দামের দুটি গাড়িতে। বেশ কয়েকটি ট্রাক, একটি ইটভাটা ছাড়াও কোটি টাকার ঠিকাদারি ব্যবসা আছে তার। ডোমনপুকুর এলাকায় প্রায় ৪ একর আয়তনের পুকুরও আছে নুরুর।

গত শনিবার রাতে শাজাহানপুর থানায় ঢুকে অস্ত্র মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে নুরুজ্জামানসহ ৯ জনকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসতে থাকে নানা অপকর্ম। শনিবারের রাতের হামলায় ৮ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনার পর নুরুজ্জামান ও তার সহযোগীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৫টি গুলিসহ দুটি বিদেশি পিস্তল, মাদক ও দেশি অস্ত্র জব্দ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নুরুজ্জামানসহ ৪৫ জনকে আসামি করে পৃথক আইনে দুটি মামলা হয়েছে।

নুরুজ্জামান ছাড়াও গ্রেফতার আসামিরা হলেন-উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক বোরহান উদ্দিন, আড়িয়া ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন হাসান, কর্মী সাদ্দাম রবীন, রমজান আলী, মিরাজুল রহমান, আমিনুল ইসলাম ও মিঠুন মিঞা।

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম জানান, নুরুজ্জামানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতেই তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সাতটি গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল জব্দ করা হয়। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হাসান নাজমুলের বাগানবাড়ি থেকে আটটি গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল জব্দ করা হয়েছে। তবে নাজমুল পলাতক। এ ঘটনায় নুরুজ্জামানসহ ৪৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ মামলায় আটক ৯ নেতাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া দুই নেতার বাড়ি থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল ও ১৫টি গুলি উদ্ধারের ঘটনায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে।

এ ঘটনায় গত রবিবার সন্ধ্যায় নুরুজ্জামানকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বরাত দিয়ে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নুরুজ্জামানকে শাজাহানপুর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর