দেড় বছর বয়সী সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে তাহমিনা আক্তার (২৪) নামে এক নারী চাঁদপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া চট্টগ্রামগামী সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। বুধবার দুপুরে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের হাজীগঞ্জ কাজীগাঁও এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর বিকালে ঘটনাস্থল থেকে মা ও শিশুর লাশ উদ্ধার করেন চাঁদপুর রেলওয়ে থানা-পুলিশ। তখন হাজীগঞ্জ থানা-পুলিশের সদস্যরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
তাহমিনা আক্তার হাজীগঞ্জ উপজেলার ধড্ডা গ্রামের দেওয়াঞ্জি বাড়ির রফিকুল ইসলামের মেয়ে। তার মুনতাহা (৫) নামে এক কন্যা সন্তানও রয়েছে। ২০১৯ সালে একই উপজেলার সন্না গ্রামের হাওলাদার বাড়ির নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে মাসুদুজ্জামান হাওলাদারের সাথে সামাজিকভাবে তাহমিনার বিয়ে হয়।আত্মহত্যার পর হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। বিকালে ঘটনাস্থল থেকে চাঁদপুর রেলওয়ে (জিআরপি) থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
চাঁদপুর রেলওয়ে থানার ওসি মাসুদুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের সুরতহাল তৈরি করা হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয়রা জানান, তাহমিনা বুধবার তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এর আগে গত ২৮ মার্চ তার স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। অভিযোগের পর স্বামী দেশে আসলেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা স্থানীয়দের।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, তাহমিনা আক্তার বিয়ের পর তার বাবার বাড়িতে থাকতেন। বাবার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ধার নিয়ে স্বামীকে কুয়েতে পাঠান। স্বামী প্রবাসে থাকা অবস্থায় তাহমিনার সাথে পারিবারিক বিষয় নিয়ে মোবাইলে বাক বিতণ্ডা হয়। তার স্বামী তাকে বাবার বাড়ী থেকে অন্যত্র থাকতে বলে। এ কারণে তিনি হাজীগঞ্জ মকিবাদ চৌধুরী পাড়ায় দুই সন্তানকে নিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। সেখানে থাকা অবস্থায় স্বামী তাকে নানা অপবাদ দিয়ে মোবাইল ফোনে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতেন এবং তাদের ভরণ পোষণ দিতেন না। স্বামী প্রবাসে থাকাবস্থায় তাকে তালাক দেন।
এদিকে গত ১৮ এপ্রিল তাহমিনার স্বামী মো. মাসুদুজ্জামান হাওলাদার দেশে আসেন এবং মোবাইল ফোনে তাকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন। তাকে পুনরায় তার সংসারে যাওয়ার জন্য বলেন। যদি স্বামীর সংসারে না যান তাহলে মাসুদুজ্জামান তাদের স্বামী-স্ত্রীর বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন। তাহমিনা আক্তার হাজীগঞ্জ থানায় গত ২৮ মার্চ অভিযোগ দেওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করার জন্য এসআই আব্দুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এসআই আব্দুর রহমান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি সুরাহার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ অভিযুক্ত মাসুদুজ্জামানের পরিবারের সাথে বসার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারা রাজি হননি। এরপর গত এক সপ্তাহ পূর্বে মাসুদ্দুজামান দেশে আসেন। কিন্তু বাড়িতে না এসে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকেন। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে কোনো সুরাহা করা সম্ভব হয়নি। পরে জানতে পারি তিনি আবার প্রবাসে চলে গেছেন।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল