১৩ মে, ২০২৪ ১৩:৫৫

শরীয়তপুরে নির্বাচনি সভায় প্রার্থী ও ভোটারদের চেয়ারম্যানের হুমকি, ভিডিও ভাইরাল

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

শরীয়তপুরে নির্বাচনি সভায় প্রার্থী ও ভোটারদের চেয়ারম্যানের হুমকি, ভিডিও ভাইরাল

ফাইল ছবি

শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের একটি সভায় এক ইউপি চেয়ারম্যান ভোটারদের ও চেয়ারম্যান প্রার্থীকে হুমকি দিচ্ছেন এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

 শরীয়তপুর সদরের চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন দিপু ও সভায় উপস্থিত ভোটারদের হুমকি দিয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যানের হুমকি দেওয়ার ৪ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

প্রার্থীরা হলেন- চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান উজ্জ্বল, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল আমিন কোতোয়াল, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়া, দিপুর স্ত্রী পেনসি বেগম ও আলআমিন খান। ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার ও ইকবাল হোসেন রতন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সামিনা ইয়াসমিন ও ফাতেমা আক্তার শিল্পী।

চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান কামরুজ্জামান উজ্জ্বল (ঘোড়া প্রতীক), ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সাখাওয়া হোসেন (তালা) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সামিনা ইয়াসমিনের (ফুটবল) পক্ষে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। 

শনিবার রাতে চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রিপন সরদারের বাড়িতে ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই উঠান বৈঠকে বক্তব্য দেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম। বক্তব্যে আরেক উপজেলা চেয়ারম্যান (আনারস) প্রতীকের পদপ্রার্থী দিপুকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দেন। এছাড়া ওই সভায় উপস্থিত ভোটারদের উদ্দেশ্য করেও হুমকি দেওয়া হয়। আব্দুস সালামের বক্তব্যের ৪ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শনিবার রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আব্দুস সালাম চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন দিপুকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, ‘৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ওকে শূন্য ভোট দিতে হইবো। ও ভোট দিতেও যেন আইতে না পারে। এই ব্যবস্থা করতে পারবেন?’ 

ভোটারদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ভোট হবে ইভিএমে। পরিষ্কার কথা। ভাই দলে ঢুকে কেউ চালাকি করবেন না। আপনারা ভোট কেন্দ্রে যাবেন, বুথ থাকুক। বলবেন এইয়া বুঝি না। ইভিএমে কখনো ভোট দেই নাই। আপনি আসেন আমার ভোট দিয়া যান। এই কথা আপনি ভেতরে বইসা বলবেন। আমার এজেন্ট শুনব। আমি ভোট দেব ঘোড়া মার্কায়, ভোট দেব তালা মার্কায়, ভোট দেব ফুটবল মার্কায়।

এ সময় তিনি ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা পারবেন? যে এইডা বলতে না পারবেন সে সন্দেহের তালিকায়। যে ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে না যাইবেন সেও সন্দেহের তালিকায়। আর দিপু যদি আমাদের চন্দ্রপুর ঢোকে। ওরা যদি চন্দ্রপুরে ভোট চাইতে আসে, ওগো দৌড়াতে পারুম না? দৌড়াইতে পারবেন না? কালকে দিপুর বউ ভোট চাইতে আইছিল, অগো দৌড়াইয়া দিছে। আজ থেকে ওরা যাতে চন্দ্রপুরে ভোট চাইতে না আইতে পারে। কোন হুমকি-ধামকি মারবেন না। সমনা-সামনি মারবেন। স্পষ্ট কথা, দুই কুল রক্ষা কইরা চলবেন না। তলে-তলে খাতির রাইখেন না। ওদের সাথে কারা ভোট চাইতে যান তা খবর পাই। তলে তলে খাতির রাখলে দিপুর মাইরও খাইবেন, আমাদের মাইরও খাইবেন। চন্দ্রপুর থেকে কাস্টিং ভোটের শতভাগ দিতে চাই।

জানতে চাইলে চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান বলেন, ‘আমি আমার কর্মী-সমর্থকদের সাথে কথা বলেছি। তাদের ভোট সম্পর্কে ধারণা দিয়েছি। কাউকে কোনো হুমকি দেইনি। আর দিপু নিজেই আমার বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলছে। আমাকে হুমকি দিচ্ছে।’

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন দিপু বলেন, আমাকে নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে। প্রচার-প্রচারণায় বাঁধা দিচ্ছে। আমি রিটার্নিং অফিসার ও থানায় অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু প্রতিকার পাচ্ছি না। আমি, আমার পরিবার ও ভোটাররা এমন কর্মকাণ্ডে শঙ্কিত ও ভীত।

তবে এটা নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান উজ্জ্বল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

শরীয়তপুর সদরের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাইনউদ্দিন বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার প্রচারণার সময় ভোটারদের ও কোনো প্রার্থীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আমরা পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, কোনো প্রার্থী বা ভোটারকে কেউ হুমকি দিলে বা বল প্রয়োগ করলে তা নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। এমন অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ এনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর